Monday, March 29, 2021

বেদের কৃষ্ণ

জয় রাধামাধব






     

অনেকে বলতে থাকেন কৃষ্ণ দ্বাফর যুগের তাহলে বেদে কৃষ্ণ কি করে আসবে? এমনকি তারা এটাও বলেন গীতা মহাভারতের অংশ

 

কৃষ্ণ তার মুখনিস্মৃত গীতা যদি শুধু দ্বাফরের হয়ে থাকে তাহলে গীতাকে মিথ্যা বলতে হবে কারন  গীতায় বলা হয়েছে এই জ্ঞাণ আমি (কৃষ্ণ) প্রথমে বিবস্বানকে দিয়েছিলাম পরে তাহা তার পুত্র মনুকে দেওয়া হয়

                                                  

                                                                শ্রীভগবানুবাচ

ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্

বিবস্বান্ মনবে প্রাহ মনুরিক্ষ্বাকবেহব্রবীৎ।।


অর্থঃ-() শ্রীভগবান্ বলিলেনএই অব্যয় যোগ আমি সূর্য্যকে বলিয়াছিলাম সূর্য্য (স্বপুত্র) মনুকে এবং মনু (স্বপুত্র) ইক্ষাকুকে ইহা বলিয়াছিলেন

…………….. গীতা ৪/১


এই একটা শ্লোক দ্বারাই প্রমাণ হয় কৃষ্ণ ও তার গীতা দ্বাফরের পূর্বেও ছিলো গীতার জ্ঞাণ মহাভারতের সময় পুনরায় প্রদান করা হয় মানে গীতা মহাভারতের অংশ বিশেষ নয়, অংশ বিশেষ বলাটা একটা অপপ্রচার/ভূল ধারনা মাত্র।

   

এখানকার এই মনু সপ্তম মতান্তরের বৈবস্বত মনু আশ্চর্য্যের বিষয় তাই নাহুম আসলেও সেই রকম এখন দেখা যাক  শান্ডিল্য ভক্তি সুত্রতে গীতার কথা বিদ্যমান শান্ডিল্য ঋষিও শ্রুতি মন্ত্রের ঋষি

       

সৈকান্তভাবো গীতার্থ প্রত্যভিজ্ঞানাৎ।।৮৩।।

…… শান্ডিল্য ভক্তিসুত্র

 

এখন বলতেই পারেন যে শান্ডিল্য ভক্তি সুত্র প্রক্ষিপ্ত কারন আপনাদের নিকট সবই প্রক্ষিপ্ত যেমনটি আপনি নিজেই প্রক্ষিপ্ত প্রক্ষিপ্ত ফন্ডিতগণের নিকট আরেকটি প্রমান দ্বাড় করিয়ে দিলাম সেটা হলো বাল্মীকি রামায়নে কৃষ্ণ হুম চিন্তার বিষয় এটাও দেখতে হলো আপনাদের

 

বাল্মীকি রামায়নে কৃষ্ণ:


শার্ঙ্গধন্বা ঋষীকেশ: পুরুষ: পুরুষোত্তম:

অজিত: খড়্গধৃগ বিষ্ণু: কৃষ্ণশ্চৈব বৃহদবল:

অনুবাদ: আপনি শার্ঙ্গকার্মুকধারী, ঋষিকেশ(অর্থাৎ, ইন্দ্রীয়গামের প্রতু), বিশ্বব্রহ্মান্ডের সত্ত্বা, পুরুষোত্তম (সকলের শ্রেষ্ঠ), অজেয়, খড়গধারী বিষ্ণু এবং সর্বশক্তিমান শ্রীকৃষ্ণ

…… ১৫/১১৭ স্বর্গ, যুদ্ধকান্ড, বাল্মিকী রামায়ণ

 

মাহেন্দ্রশ্চ কৃতো রাজা বলিং বদ্ধ্বা সুদারুণম্

সীতা লহ্মীর্ভান্ বিষ্ণুর্দেব: কৃষ্ণ প্রজাপতি:২৭


অনুবাদ: আপনি অত্যন্ত পরাক্রমী দৈত্যরাজ বলিকে বন্দি করে দেবরাজ ইন্দ্রকে ত্রিভুবনের রাজা করিয়াছিলেন সীতা সাক্ষাৎ লহ্মী এবং আপনি নারায়ণ আপনি সচ্চিদানন্দস্বরুপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এবং প্রজাপতি

…… ২৭/১১৭ স্বর্গ, যুদ্ধকান্ড, বাল্মিকী রামায়ণ

 

এগুলি থেকে স্পস্টই প্রমাণিত হয় কৃষ্ণ ও গীতার অস্তিত্ব পূর্বেও ছিলো।

 

এখন অবতারবাদ সম্পর্কে কিছু ধারনা নেওয়া যাক



প্রজাপতিশ্চরতি গর্ভেহঅন্তরজায়মানো বহুদা বি জায়তে।

                          তস্য যোনিং পরি পশ্যন্তি ধীরাস্তস্মিন্হ তস্তুর্ভূবনানি বিশ্বা।

  

অনুবাদ: প্রজাপালক পরমাত্মার সত্ত্বা সম্পুর্ণ পদার্থে বিদ্যমান, তিনি অজন্মা হয়েও অনেক রুপে প্রকট হন। ওনার কারন শক্তিতে সম্পূর্ণ ভূবন স্থিত। জ্ঞানী জনেরা ওনার মুখ্য স্বরুপ দেখতে পান।

………… শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/১৯ (শ্রী রাম শর্মা-ভাষ্য)

 

আরেকটি মন্ত্র দেখা যাক


এষ হ দেব: প্রদিশোহনু সর্বা: পূর্বো হ জাত: স উ গর্ভে অন্ত:।

স এব জাত: স জনিষ্যমাণ: প্রত্যঙ্ জনাংস্তিষ্ঠতি সর্বতোমুখ:।।


অনুবাদ: এই পরম দেবতাই পূর্বাদি সমস্ত দিক ও অগ্নিকোণ প্রভৃতি অবান্তর দিক সকল ব্যাপিয়া আছেন; তিনিই সকলের পূর্বে আবির্ভূত হন। তিনিই গর্ভের অভ্যন্তরে বর্তমান, তিনিই শিশুরুপে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরেও তিনিই জন্মিবেন। তিনিই সর্বোতমুখ হইয়া সকলের অভ্যন্তরে বাস করেন।

................. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ২/১৬ অথবা ৩২।

 

প্রশ্নে উঠতে পারে উক্ত মন্ত্রের অনুবাদে শিশু কোথ্থেকে আনলেন?

 

আরেকটি মন্ত্র দেখা যাক


এষ এস্য মদ্যোরহবো চষ্টে দিব: শিশু: য ইন্দুর্বারমাবিশৎ

  



অনুবাদ: (দিব্য শিশু)  দ্যুলোকের যে পুত্র (যে ইন্দু) যে সৌম বটে (বারং আ বিশাৎ) ছলনীমে প্রবেশ করে, ঐ আনন্দ বিতরনকারি সোমরস সবাইকে দেখেন।

……… সামবেদ ১২৭৭ অথবা ৪/৪/৩/১০ উত্তরার্চিক, সামবেদ। (সুবোধ ভাষ্য)

 


উপনিষদেও সৎ স্বরুপ জন্ম নেন:


তদৈক্ষত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি তত্তেজোহসৃজত। তত্তেজ ঐক্ষত বহু স্যাং প্রজায়েয়েতি। তদপোহসৃজত। তস্মাদ্ যত্র কৃচ শোচতি স্বেদতে বা পুরুষস্তেজস এব তদধ্যাপো জায়ন্তে।।


সরলার্থঃ সেই সৎ-স্বরুপ আলোচনা করিলেন ( বা সঙ্কল্প করিলেন) - 'অামি বহু হই, অামি জন্ম গ্রহণ করি।' তারপর তিনি তেজ সৃষ্টি করিলেন। সেই তেজও সঙ্কল্প করিল, ' আমি বহু হই, আমি জন্ম গ্রহণ করি।' সেই তেজ জল সৃষ্টি করিল। তাই পুরুষ যখন যেখানে শোকার্ত বা ঘর্মাক্ত হয়, সেখানেই তেজ হইতে জল উৎপন্ন হয়।

...... ৬/২/৩ ছান্দোগ্য উপনিষদ।



এখন দেখ যাক গীতা এই জন্ম সম্পর্কে কি বলে?


জন্মকর্ম্ম মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ

ত্যক্ত্বা দেহং পুনর্জ্জন্ম নৈতি মামেতি সোহর্জ্জুন।।


অর্থঃ-() হে অর্জ্জুন, আমার এই দিব্য জন্ম কর্ম্ম যিনি তত্ত্বতঃ জানেন, তিনি দেহত্যাগ করিয়া পুনর্ব্বার আর জন্মপ্রাপ্ত হন নাতিনি আমাকেই প্রাপ্ত হন

………… গীতা ৪/৯

 

এখানে দিব্য জন্মের কথা বলা হয়েছে।

  


শঙ্করাচার্য্য ও রামানুচার্য্য উভয়ই এই জন্মকে অপ্রাকৃত বলেছেন। ইশ্বরের অপ্রাকৃত জন্ম স্বেচ্ছায় হয়ে থাকে। স্ক্রিণশটটি জগদীশ চন্দ্র ঘোষের গীতা ভাষ্য থেকে।

 

উপরোক্ত প্রমান্যগুলি থেকে স্পস্টতই প্রমান হয় । ঈশ্বর শিশুরুপেজন্ম নেন পরেও তিনিই জন্ম নেন। এছাড়া অবতারবাদ যে প্রমান্য তাহা উপনিষধ ও গীতা থেকে আরো স্পস্টভাবেই প্রমান হয়।

 

সদেব সৌম্যেদমগ্র আশীদেকমেবাদ্বিতীয়ম্।

অনুবাদ: এখানে উদ্দালক স্বীয় পুত্র শ্বেতকেতুকে আহ্বান করিয়া বলিলেন, বৎস এই পরিদৃশ্যমান জগৎ সৃষ্টি হইবার পূর্বে একমাত্র নিত্যসত্তাবিশিষ্ট অদ্বয় বস্তুই বর্তমান ছিলেন।

....... ছান্দোগ্য উপনিষদ ৬/২/১



ছা্ন্দোগ্যউপনিষধের এই সৌম্য আত্মাই কৃষ্ণ। গীতায় এটাই কৃষ্ণকে সৌম্য বলে আক্ষায়িত করা হয়েছে।


সৌম্যং জনার্ধন
......... গীতা ১১/৫১


অবতারবাদ অস্বীকার করা মানে বেদ-গীতা অস্বীকার করা।


পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।।

অনুবাদ: এখানে ঐ পূর্ণ অবতারী ও এই অবতার উভয়ই পূর্ণ অর্থাৎ সর্ব্বশক্তি সমন্বিত। পূর্ণ অবতার হইতে পুর্ণ অবতার লীলা বিস্তারার্থ প্রদুর্ভূত হন। লীলাপূর্তীর পরে পূর্ণ অবতারের পূর্ণ স্বরুপকে আপনাতে গ্রহণপূর্বক পূর্ণ অবতারী অবশেষে বর্তমান থাকেন, পরমেশ্বরের পূর্নত্ব কোনে ক্রমে হানিপ্রাপ্ত হয়না।
........ বৃহদারন্যক ৫/১

 

ছবিটি মাধ্বচার্য্যের বৃহদারন্যক উপনিষধের ৫/১/১ এর ভাষ্য

এখানে মহাবিষ্ণুর অবতার পূর্ণ: প্রকীর্তিতা: বলা হয়েছে।


এখন দেখা যাক বেদের কৃষ্ণের কথা সরাসরি কোথায় আছে?


বেদে বিষ্ণু কৃষ্ণ এক । তবুও কিছু কিছু স্থানে বাসুদেব কৃষ্ণের কথা রয়েছে,

 

                                   ওঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহি

                                             তন্নো বিষ্ণু: প্রচোদয়াৎ।।

  



অনুবাদ: আমরা নারায়ণকে জানবো, বাসুদেবকে (কৃষ্ণকে) ধ্যান করবো, সেই ধ্যানে বিষ্ণু আমাদের প্রেরিত করুন

 

……… কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তরীয় আরন্যক ১০// অথবা মহানারয়ণ উপনিষধ //১৬

 

বাসুদেব অর্থে কৃষ্ণকেই বুঝিয়েছে তার উল্লেখ ভাষ্যকর দিয়েছেন:

  



কৃষ্ণাবতারে বসুদেব পুত্রই বাসুদেব যিনি পরমব্রহ্ম বিষ্ণু।

 

সর্ব্ববেদৈকবেদ্যায সর্ববেদমযায় চ।

বাসুদেবায নিত্যায় নমো ভক্তিপ্রিযায তে।


অনুবাদ: আপনি সমস্ত বেদের একমাত্র বেদ্য, সর্ব্ববেদময়, বাসুদেব, নিত্য এবং ভক্তের প্রিয়; আপনাকে ননমস্কার।

…………… ১০নং শ্লোক, ৭০ অধ্যায়, অশ্বমেদিকা পর্ব।


আমরা মহাভারতেও দেখতে পাই কৃষ্ণকে বাসুদেব বলিয়া সম্মোধন করা হচ্ছে।


বেদে বিষ্ণুর পত্নৈ(স্ত্রীর) কথা পাওয়া যায় মানে কৃষ্ণের অস্তিত্ব্য বিদ্যমান।


 বিষ্ণুর গোপী স্ত্রীঃ


ঘৃতবতী সবিতরাধিপত্যৈঃ পয়স্বতী রস্তিরাশা নো অস্তু। ধ্রুবা দিশাম্ বিষ্ণুপত্নঘোরাহস্যেশানা সহসো যা মনোতা। বৃহস্পতির্ম্মাতরিশ্বোত বায়ুঃ সন্ধুবানা বাতা অভি নো গৃণন্ত্ত। বিষ্টম্ভো। দিবো ধরুণঃ পৃথিব্যা অস্যেশানা জগতো বিষ্ণুপত্নী।


অনুবাদঃ ঘি সমৃদ্ধ, হে সবিতা, আমাদের প্রতি করুনা দান করুন। আমাদের দুধে সার্বভৌম অঞ্চল হয়ে উঠুক। বিষ্ণু পত্নী এই অংশে দৃঢ় ও শক্তিশালী, মৃদু এই শক্তির উপর রাজত্ব করছেন। একসাথে প্রবাহিত বাঞ্চনীয় বাতাসগুলি আমাদের জন্য করুনাময়। আকাশ ও পৃথিবীর সমর্থক বিষ্ণুপত্নী জগৎ শাসন করছেন।
................. কৃষ্ণ যজুর্বেদ ৪/৪/১২



আদিত্যৈ বিষ্ণুপত্ন্যৈ চরুরগ্নয়ে বৈশ্বানর

অনুবাদঃ আদিত্য বিষ্ণু পত্নী পায়াসান্ন দিয়ে অতিরাত্রে(বৈশ্বানর) অগ্নি দেবতার যজ্ঞ করেন।
....... কৃষ্ণ যজুর্বেদ ৭/৫/১৪

 

বিষ্ণুর গোপীপত্নৈ অর্থে বিষ্ণুর কৃষ্ণরুপের পত্নীকেই বুঝায়।


এই মন্ত্রে কৃষ্ণ মাধব নামে স্পস্টভাবেই রয়েছেন


মধুশ্চ মাধবশ্চ শুক্রশ্চ শুচিশ্চ নভশ্চ নভস্যশ্চেষশ্চোর্জ্জশ্চ সহশ্চ সহস্যশ্চ তপশ্চ তপস্যশ্চোপযামগৃতীতোহসি সংসর্পোহস্যংহস্পত্যায় ত্বা।

অনুবাদঃ হে ভগবান, তুমি মধু ও মাধব(কৃষ্ণ-গীতা ১/১৪), তুমি জ্যোতির্ময় ও শুচি, তুমি দ্যুলোক ও দ্যুলোকবিহারী, তুমি পরাসিদ্ধি ও পরম বল, তুমি বল ও বলদাতা, তুমি সাধনা ও সাধ্য। সর্বত্র ব্যাপক(বিষ্ণু) তুমি সাদকের ঋদয়ে বর্তমান। হে শুদ্ধসত্ত্ব(বৈষ্ণব-বিষ্ণুর উপাসক- শুক্ল যজুর্বেদ ৫/২১ ও ৫/২৫), পাপনাশক দেবতার অনুগ্রহ লাভের জন্য তোমাকে যেনো লাভ করি।

.........কৃষ্ণযজুর্বেদ ১/৪/১৪



এখন দেখা যাক বরাহরুপী কৃষ্ণের কথা সরাসরি রয়েছে 


                                       অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণুক্রান্তে বসুন্ধরে

                                       শিরসা ধারিতা দেবি রক্ষস্ব মাং পদে পদে।।

                                          উদ্ধৃতাসি বরাহেণ কৃষ্ণেন শতবাহুনা

                                            ভূমির্ধেনুর্ধরিত্রী ধরণী লোকধারিণী

  



অনুবাদ: হে দেবি, বসুন্ধরা অশ্বসমুহ তোমাকে পদক্ষেপ করেছে, রথগুলি ধাবিত হয়েছে, বিষ্ণু(বামনরুপে) পদক্ষেপ করেছেন (স্নানকালে) তুমি মস্তকে ধৃত হয়ে পদে পদে আমাকে রক্ষা করো তুমি বরাহরুপী শতবাহু কৃষ্ণের দ্বারা উদ্ধৃত হয়েছ তুমি লোকধারণকারী পৃথিবী, ধেনু, তুমি ধরিত্রী, আশ্রয়দাত্রী

……… কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈতেরীয় আরন্যক ১০// অথবা মহানারয়ন উপনিষধ /(-)

 

এখন দেখা যাক দেবকী নন্দন কৃষ্ণের কথা


তদ্ধৈতদ্ ঘোর আঙ্গিরস: কৃষ্ণায় দেবকীপুত্রায়োক্ত্বোবাচাপিপাস এব  বভূব সোহন্তবেলায়া মেৎত্রয়ং প্রতিপদ্যতা অক্ষিতমস্যচ্যুতমসি প্রাণসংশিতমসীতি তেত্রৈতে দ্বে  ঋচৌ ভবত: ।।

   


অনুবাদ: ঘোর অঙ্গিরস বংশোদ্ নামক ঋষি দেবকীনন্দন কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে এই তত্ত্ব বলেছিলেন ইহা শুনে (কৃষ্ণ) নিস্পৃহ (সর্ববিষয়ে নি:স্পৃহ) হইলেন (ঘোর আঙ্গিরস বলিলেন) মৃত্যুকালে মানুষ এই তিন মন্ত্র উচ্চারন করিবে তুমি (কৃষ্ণ) অক্ষর, তুমি (কৃষ্ণ) অচ্যুত, তুমি (কৃষ্ণ) প্রাণ সংশিত এই বিষয়ে দুইটি ঋক্ আছে উক্ত শ্রুতিতে দেবকীপুত্র বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে অক্ষর ব্রহ্ম বলা হয়েছে

……….ছান্দোগ্য উপনিষদ /১৭/


এখন একদল বলতে পারেন কৃষ্ণ অঙ্গিরস ঋষির শিষ্য কবে ছিলো?


নিরুক্তিকার যাস্ক মতে  অঙ্গিরা অঙ্গার মাত্র। ভারত বর্ষে অঙ্গিরা নামে প্রাচীন ঋষি বংশ ছিলো। এছাড়া জীবনীকোষ- ভারতীয়- পৌরণিক দেখলে জানা যায় একদা শ্রীকৃষ্ণ ব্যাঘ্রপদ ঋষির আশ্রমে অঙ্গিরা মুনির নিকট পাশুপত যোগ লাভ করতে কঠোর তপস্যা করেন। 


      





উপনিষদের দেবকী নন্দন কৃষ্ণ দেখালে তথাকথিত আর্য সমাজীরা বলে থাকেন বেদে অর্জুন পুত্র কৃষ্ণ আছে। ঐটা কি করে সম্ভব?

মহাভারতের পরিশিষ্ট হরিবংশতে অর্জুন পুত্র কৃষ্ণ রয়েছে।


   


আসুন দেখি শাঙ্খায়ন আরন্যক কি বলে?




কৃত্সনং হারীতীব্রাহ্মণমেবোদাহরতি

অনুবাদ: কৃষ্ণই হরি।

................ ৮/১০ শাঙ্খায়ন আরন্যক


আমরা যজ্ঞ বৈ বিষ্ণুর কথা শুনেছি আসুন দেখি যজ্ঞ বৈ কৃষ্ণের কথা



যজ্ঞ বৈ কৃষ্ণ

অনুবাদ: যজ্ঞই কৃষ্ণ।

................. তৈতেরীয় আরন্যক ৫/২/১৩



ঋষিকেশরুপি কৃষ্ণ:


তমারাধ্য জগন্নাথং প্রণিপত্য পিতামহ:। পপ্রচ্ছ যোগতত্ত্বং মে ব্রূহি চাষ্টাঙ্গসংযুক্তম্।।৩।।


অনুবাদ: যিনি জগন্নাথ(জগতের প্রভু), তাকে আরোধনা করে এবং প্রণাম করে পিতামহ (ব্রহ্মা) বললেন- ‘আমাকে অষ্টাঙ্গ যোগতত্ত্ব বলুন।’


তমুবাচ ঋষিকেশো বক্ষ্যামি শৃণু তত্ত্বত: । সর্বে জীবা: সুখৈর্দু:খৈর্মায়াজালেল বেষ্টিতা:।।৪।।


অনুবাদ: তাঁকে ঋষিকেশ বললেন, - বলবো শোন, যথার্থত: সকল জীব সুখ ও দু:খ সমুহেতর মায়াজালে বেস্টিত।।

………… কৃষ্ণযজুর্বেদীয় যোগতত্ত্বোপনিষৎ (৩-৪)


পাঞ্চজন্যং হৃষীকেশো দেবদত্তং ধনঞ্জয়ঃ।
পৌণ্ড্রং দধ্মৌ মহাশঙ্খং ভীমকর্ম্মা বৃকোদরঃ।। /১৫



............... গীতা ১/১৫

এ শ্লোকের টীকায় মধুসূদন সরস্বতী লিখেছেন, ‘সর্ব্বেন্দ্রিয় প্রেরকত্বেন সর্ব্বান্তর্যামি সহায়ঃ পান্ডবানামিতি কথয়িতুং হৃষীকেশপদং’ ৷



এছাড়াও আরো দেখতে পাওয়া যায় শ্যামরুপি কৃষ্ণকে


শ্যামাচ্ছবলং প্রপদ্যে শবলাচ্ছ্যামং প্রপদ্যে।

অনুবাদ: আমি শ্যামবর্ণ(ঋদয়স্থিত ভেদরহিত ব্রহ্ম) থেকে বিচিত্রবর্ণে(বিচিত্রাপূর্ণ ব্রহ্মে) যাই। আবার বিচিত্র বর্ণ হইতে শ্যামবর্ণে যাই।
........ ছান্দোগ্য উপনিষদ ৮/১৩/১


শ্যাম বলিতে কৃষ্ণকে বোঝায় তার প্রমান কি?


উতঙ্ক ঋষি কৃষ্ণকে বললেন


হিরণ্যগর্ভরুপায় সংসারোত্তারণায় চ।

পুরুষায় পুরাণায় শান্তশ্যামায় তে নম:


অনুবাদ: ভগবান! আপনি ব্রহ্মস্বরুপ, সংসার হইতে উ্ধারকারী, পুরাণপুরুষ, শান্ত-মুর্ত্তি ও শ্যামবর্ণ- আপনাকে নমস্কার।

………… শ্লোক নং ০৮, অধ্যায় নং ৭০, অশ্বমেদিকা পর্ব।


একদল মুর্খ বলবে কৃষ্ণ মুক্ত আত্মা পরমাত্মা নয়। তাদের জন্য বলি মুক্ত আত্মা গর্ভদান করে কবে থেকে? 


মম যোনির্মহদ্ ব্রহ্ম তস্মিন্ গর্ভং দধাম্যহম্।
সম্ভবঃ সর্ব্বতভূতানাং ততো ভবতি ভারত।।

অনুবাদঃ হে ভারত, প্রকৃতিই আমার গর্ভদান-স্থান। আমি তাহাতে গর্ভধান করি, তাহা হইতে সর্ব্বভূতের উৎপত্তি হয়।
....... গীতা ০৩


সর্ব্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্ত্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ।
তাসাং ব্রহ্ম মহদ্ যোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা।।

অনুবাদঃ হে কৌন্তেয়, দেবমনুষ্যাদি বিভিন্ন যোনিতে যে সকল শরীর উৎপন্ন হয়, প্রকৃতি তাহাদের মাতৃস্থানীয়া এবং আমিই তাদের গর্ভদানকর্তা পিতা।
....... গীতা ০৪


একই রকম কথা বেদেও পাওয়া যায়


বিষ্ণুর্যোনিং কল্পয়তু ত্বষ্টা রুপাণি পিংশতু।


অনুবাদঃ বিষ্ণু নারীর অঙ্গকে গর্ভধানের উপযুক্ত করে দিন, ত্বষ্টা গর্ভস্থ সন্তানের অবয়ব স্থির করে দিন।
........ ঋগ্বেদ ১০/১৮৪/১


এখান থেকেও প্রমাণিত হয় কৃষ্ণ মুক্তাত্মা নন, পরমব্রহ্ম


তথ্য যুক্তকরা চলবে 

4 comments:

  1. বাঃ দারুন। তবে টাইপিং মিস্টেক গুলো একটু ঠিক করে নিলে, খুবই ভালো হয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. দাদা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষা আমার মধ্যে জিহ্বাতে লেগে রয়েছে তাই চাইলেও শুদ্ধ বাংলা বলতে ভূল হয় আমার। সাধু-চলিত মিক্সড হয়ে যায়। তার পরেও আপনি যদি আমাকে ইনবক্সে ভূলগুলি ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেন তাহলে আমার উপকার হবে ভূলগুলি শুদ্ধ করার।

      Delete
  2. হারিবোল🥴🥴🥴
    অনুবাদের গুষ্ঠি উদ্ধার করে দিলো🙌🙌🙌🙌🙌

    ReplyDelete
    Replies
    1. কোথায় কোথায় অনুবাদে ভূল রয়েছে দেখিয়ে না দিয়ে ভাট বকছেন কেনো? ৩০২ জন ব্লগটি পড়েছেন আপনিই একমাত্র অভিযোগ করলেন। দেখিয়ে দিন কোন কোন অনুবাদে ভূল রয়েছে।

      Delete