পুরাণ বলিতে অস্টাদশ পুরাণ বোঝায়, অন্য কিছু নহে:
পুরানের প্রতি অবজ্ঞা হওয়ার তিনটি কারন বিদ্যমান ঐতিনটি কারন নিয়ে আলোচনা করা যাক:
তিনটি প্রশ্ন প্রায়শই করতে শোনা যায়
ক) বেদ আমাদের মুল ধর্মগ্রন্থ, পুরানের প্রয়োজন নাই
খ) পুরান বলতে কি অস্টাদশ পুরানকে বোঝায় নাকি ব্রাহ্মণ গ্রন্থকে বোঝায়?
গ) পুরান ব্যাসদেব রচনা করলে ব্যাসের পুর্বে পুরানের উল্লেখ পাওয়া যায় কেনো?
আসুন দেখে নেওয়া যাক যারা বলে শুধু বেদ মানবে পুরান মানবে না তাদের জন্য পুরান সম্পর্কে কোথায় কি কি বলা হয়েছে?
ঋচ: সামানি ছন্দাংসি পুরাণং যজুষা সহ
……………অথর্ববেদ ১১/৭/২৪
পুরাণং বেদ: সোহয়ম্ ইতি কিঞ্চিৎ পুরাণম্ আচক্ষীত
…………… শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩/৪/৩/১৩
ইতিহাস: পুরানং
…………… বৃহদারন্যক উপনিষধ ৭/১/১
গোপথ ব্রাহ্মণ ১/২/১০ ও আশ্বলায়ন গৃহ্যসুত্রে ৪/৬ এ পুরান শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।
গৌতম ধর্মসুত্র ৮/৬ এ বলা হয়েছে বাক্যেতিহাস পুরাণ কুশলাহ।
গৌতম ধর্মসুত্র ১১/১৯ এ বলা হয়েছে যে রাজা যখন কোনো ধর্মনীতি কিংবা আইন প্রণয়ন করবেন তখন বেদ, বেদাঙ্গ, ধর্মশাস্ত্র ও পুরানের বিধান অনুকরন করবেন।
অথ পুরাণে শ্লোকৌ উদাহরতি
অস্টাশত সহস্রাণি যে প্রজামীষিরর্ষয়: ইত্যাদি।
………… আপস্তম্ভ, ২/২৩/৩-৪
বৃহস্পতি সংহিতা ১/১/১১৫: পুরান সাহিত্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
যাজ্ঞবল্ক সংহিতা ১/৩: পুরাণকে ধর্মের চতুর্দশ অংশের এক রুপ বলা হয়েছে।
বেদং গৃহীত্বা য: কশ্চিচ্ছাস্ত্রঞ্চৈবাবমন্যতে।
স সদ্য: পশুতাং যাতি সম্ভবানেকবিংশতিম্।।
অনুবাদ: যে ব্যাক্তি বেদ অধ্যায়ন করিয়া সেই গর্ব্বে অন্যান্য
শাস্ত্রর উপদেশ অগ্রাহ্য করে, সে একবিংশতিবার পশু-জন্ম প্রাপ্ত হয়।
………… শ্লোক নং ১১, অধ্যায় ০১, অত্রি সংহিতা
শ্রুতি-স্মৃতিতে যেখানে পুরানের উল্লেখ রয়েছে সেখানে আপনি পুরান মানতে বাধ্য না মানলে শ্রুতি-স্মৃতি বিরোধী নাস্তিক আপনি। তাই অাপনি পুরান মানতে বাধ্য।
এখন দেখে নেওয়া যাক যারা পুরান মানেন বলিয়া থাকে কিন্তু ব্রাহ্মণগ্রন্থকে পুরান বলেন। ব্রাহ্মণ গ্রন্থ যে পুরান নয় তাহা আলোচনা করবো।
ব্রাহ্মণ গ্রন্থ কি উপরোক্ত ছবিটি থেকে স্পস্ট করে বোঝা যায়।
পুরাণের লক্ষণ পাঁচটি । যেমন
সর্গশ্চ প্রতিসর্গশ্চ বংশে মন্বন্তরাণি চ ।
সর্বেসেব্রতেষু কথ্যন্তে বংশানুচরিতঞ্চ যৎ ।। (বিষু পুরাণ ৩/৭/২৫)
অনুবাদ: সর্গ-প্রতিসর্গ অর্থাৎ সৃষ্টি এবং প্রলয়ের পর সৃষ্টি, ঋষি এবং রাজন্যবর্গাদির বংশাবলী, মন্বন্তর বা এক এক মনুর রাজত্বকাল এবং বংশানুচরিত এগুলো বর্ণনা করা হয়েছে ।
সেজন্যে গরুড় পুরাণেও বলা হয়েছে
‘সর্গশ্চ প্রতিসর্গশ্চ বংশ মন্বন্তরানি চ । বংশানুচরিতঞ্চৈব পুরাণং পঞ্চলক্ষণম্ ।’
(গরুড় পুরাণ ২২৭/১৪)
আভূতসংপ্লবাৎ তে স্বর্গজিত: পুন: সর্গে বীজার্থা ভবন্তি ইতি ভবিষ্য পুরাণে
…………… আপস্তম্ভ ধর্মসুত্র ২/২৪/৫-৬
রেফারেন্স নাম্বার ভিন্ন হতেই পারে তবে ভবিষ্য পুরানের উল্লেখ রয়েছে।ভবিষ্য পুরান অস্টাদশ পুরানের একটি।
কল্পসুত্রগুলি চারটি বিভাগে বিভক্ত শ্রৌতসুত্র, ধর্মসুত্র, গৃহ্যসুত্র, শুল্বসুত্রও কোনো না কোনো বেদ সংহিতার সহিত সংযুক্ত।
উপরোক্ত বিষয়গুলি থেকে স্পস্টভাবে প্রতিয়মান হওয়া যায় যে ব্রাহ্মণগ্রন্থ পুরান নয়।
কৃষ্ণদৈপায়ন বেদব্যাস পুরান রচয়িতা হলে তার সময়কালের পুর্বের গ্রন্থগুলিতে পুরান শব্দটির উল্লেখ পাওয়া যায় কিভাবে এবিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
পুরান প্রথমে সুত্রাকারে ছিলো যাহা ব্যাসদেব বাল্মীকি মুনির নিকট থেকে শ্রবন করেছিলেন।
.................. অধ্যায় ৫ম, প্রকৃতি খন্ডম, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান।
আখ্যানৈশ্চাপ্যুপাখ্যানৈর্গাথাভি: কল্পশুদ্ধিভি:।
পুরাণসংহিতাং চক্রে পুরাণার্থবিশারদ:।।
“পুরাণার্থবিশারদ” মহর্ষি বেদব্যাস তদানীং প্রচলিত ঐ ‘পুরাণ ’ আখ্যান উপাখ্যান গাথা ও কল্প সংগ্রহ করিয়া পুরাণসংহিতা নামে এক সংগ্রহ গ্রন্থ সঙ্কলন করেন।
………… বিষ্ণুপুরাণ ৩/৬/১৬
পুরাণসংহিতাং তস্মৈ দদৌ ব্যাসো মহামুনি:।
কাশ্যপ: সংহিতাকর্ত্তা সার্বণি: শাংসপায়ন:।
লৌমহর্ষণিকা চান্যা তিষণাং মূলসংহিতা।।
মহামুনি ব্যাস ঐ পুরাণসংহিতা স্বশিষ্য লোমহর্ষণকে প্রদান করেন।
………… বিষ্ণুপুরান ৩/৬/১৯
এই চারখানি সংহিতাই অস্টাদশ পুরানের ভিত্তি। এভাবেই বেদব্যাসকে পুরানের মুলবক্তা বলা হয়
অস্টাদশ পুরাণানাং বক্তা সত্যবতীসুত:।
পুরাণাম একমেবাসীৎ তদা কল্পন্তরেহনঘ!
………… মৎস্য পুরাণ ৫৩/৪
এখান থেকে বোঝা যায় অস্টাদশ পুরাণ একত্রে ছিলো। পরে ভাগ হয়েছে।
পুরান যে আঠারো টি তাহা কিভাবে জানা যাবে? আসুন জেনে নেই
অস্টাদশপুরাণানি ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সর্বশ: ।
বেদা: সাঙ্গাস্তথৈকত্র ভারতং চৈকত: স্থিতম্ ।। ৪৫।।
অনুবাদ: অস্টাদশ পুরাণ, সমস্ত ধর্মশাস্ত্র এবং অঙ্গশাস্ত্রের সহিত চারটি বেদ তুলাদণ্ডলম্বিত একপাত্রে ছিলো আর এই মহাভারত তাহারই অন্য পাত্রে বহিয়াছিলো (তখন মহাভারতের ভারই অধিক হইয়াছিলো।
…………… শ্লোক নং ৪৫, অধ্যায় ০৫, স্বর্গারোহণ পর্ব, মহাভারত।
পুরানের ক্রম গুলি দেখলে বাকি ১৭টি পুরান কি কি জানা যায়।
তিনটি পুরান থেকে অস্টাদশ পুরানের নামের তালিকা:
ব্রাহ্মং পাদ্ম্যং বৈষ্ণবং চ শৈব লৈঙ্গং সগারুড়ম্।
নারদীয় ভাগবতমাগ্নেয়ং স্কান্দসংজ্ঞিতম্ ।।২৩
ভবিষ্যং ব্রহ্মবৈবর্তং মার্কেন্ডেয়ং সবামনম্ ।
বরাহাং মাৎস্যং কৌর্মং চ ব্রহ্মাণ্ডখ্যমিতি ত্রিষট্।।২৪
অনুবাদ: ব্রহ্মপুরাণ, পদ্মপুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, শিব পুরাণ,
লিঙ্গ পুরাণ, গড়ুর পুরাণ, নারদ পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, স্কন্দপুরাণ, ভবিষ্য
পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, মার্কেন্ডেয় পুরাণ, বামন পুরাণ, বরাহ পুরান, মৎস পুরাণ,
কূর্ম পুরাণ এবং ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ।
…………… ভাগবত ১২ স্কন্দ, ৭ম অধ্যায়, ২৩-২৪শ্লোক
ব্রহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবঞ্চ শৈবং ভাগবতং ।
ভবিষ্যং নারদীয়ঞ্চ মার্কেন্ডেয়মত: পরম্।
আগ্নেয়ং ব্রহ্মবৈবর্ত্তং লৈঙ্গং বরাহমেব ।।৩৯
স্কান্দঞ্চ বামনঞ্চৈব কৌর্স্মং সাৎস্যঞ্চ গার
ব্রহ্মাণ্ডখ্যমিতিপুণ্যোহরং পুরাণানমসুক্রম: ।।৪০
অনুবাদ: ব্রহ্ম পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ, শিব
পুরাণ, ভাগবত পুরাণ, ভবিষ্য পুরাণ, নারদ পুরাণ, মার্কেন্ডেয় পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, ব্রহ্মবৈবর্ত
পুরাণ, লিঙ্গ পুরাণ, বরাহ পুরাণ, স্কন্দ পুরাণ,
বামন পুরাণ, কূর্ম পুরাণ, মৎস পুরাণ, গরুড় পুরাণ, ব্রহ্মান্ড পুরাণ।
………… শিব পুরান, বায়বীয় সংহিতা, প্রথম অধ্যায়
ব্রাহ্মং পাদ্মং বৈষ্ণবঞ্চ শৈবং ভাগবতং তথা।
যথান্যং নারদীয়ঞ্চ মার্কেন্ডেয়ঞ্চ সপ্তমম্ ।
আগ্নেয়মষ্টমঞ্চৈব ভবিষ্যং নবমং তথা ।। ২২
দশমং ব্রহ্মবৈবর্ত্তং লৈঙ্গমেকাদশং স্মৃতম্ ।
বরাহং দ্বাদশঞ্চৈব স্কান্দঞ্চাত্র ত্রয়োদশম্ ।।২৩
চতুর্দ্দশং বামনঞ্চ কৌর্ম্মং পঞ্চদশং স্মৃতম্ ।
মাৎস্যঞ্চ গাড়ুরঞ্চৈব ব্রহ্মাণ্ডঞ্চ তত: পরম্ ।।২৪।।
অনুবাদ: তন্মধ্যে প্রথম ব্রাহ্মপুরাণ, দ্বিতীয় পদ্ম পুরাণ,
তৃতীয় বিষ্ণু পুরাণ, চতুর্থ শিব পুরাণ, পঞ্চম ভাগবত পুরাণ, ষষ্ঠ নারদীয় পুরাণ, সপ্তম
মার্কন্ডেয় পুরাণ, অস্টম অগ্নি পুরাণ, নবম ভবিষ্য পুরাণ, দশম ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, একাদশ
লিঙ্গ পুরাণ, দ্বাদশ বরাহ পুরাণ, ত্রয়োদশ স্কন্দ পুরাণ, চতুদর্শ বামন পুরাণ, পঞ্চদশ
কূর্ম্ম পুরাণ, ষোড়শ মাৎস্যপুরাণ, সপ্তদশ গরুড় পুরাণ, অস্টাদশ ব্রহ্মান্ড পুরাণ ।
…………… অধ্যায় ১৬, তৃতীয়াংশ, বিষ্ণু পুরাণ ।
অনুবাদ: আমি তোমার নিকট যে পুরাণ বলিতেছি ইহার নাম বিষ্ণু
পুরাণ। ইহা পদ্ম পুরাণের শেষে রচিত হইয়াছে।
…………… অধ্যায় ১৬, তৃতীয়াংশ, বিষ্ণু পুরাণ
No comments:
Post a Comment