ত্রয়ী বিদ্যা বলিতে কি অথর্ববেদকে বোঝায়?
উত্তর: না।
কিন্তু কেনো সে বিষয়ে রেফারেন্স সহকারে প্রমান তুলে ধরা হলো।
দয়াসমাজিরা প্রায়শই মহাভারতের রেফারেন্স টেনে বলে যে ত্রয়ী বিদ্যায় অথর্ববেদ রয়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক রেফারেন্সটি
মহাভারতের কালিপ্রসন্ন সিংহ ও গীতা প্রেস সহ দুটি মহাভারতের অনুবাদে বেদত্রয়ে অথর্ববেদের নাম পাওয়া যায়। কালিপ্রসন্ন সিংহের টি শ্লোক ছাড়া অনুবাদ আর গীতা প্রেসেরটি হিন্দি। কিন্তু কাশি দাসী, ধীরেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য্য, প্রতাপ চন্দ্র রায়, রাজশেখর বসু, রাজাগোপালচারি, কাশিদাশ মৈত্র, হরিদাশ সিদ্ধান্ত বাগীশ সহ বাকি ০৭জনের মহাভারতে এই শ্লোকটি পাওয়া যায়না। এখন দেখে নেওয়া যাক তাদের মহাভারতের অনুবাদে কি রয়েছে?
এখানে শ্লোক সহ অনুবাদ দেওয়া হলো হরিদাস সিদ্ধান্ত বাগীশ এর মহাভারতের শ্লোকসহ অনুবাদ থেকে।
.................. শ্লোক নং ৬৫, অধ্যায় নং ১১৯, অনুশাসন পর্ব।
তাহলে ব্যাপারটি একে অপরের সাংঘর্ষিক হয়ে গেলো। আসুন তাহলে সমাধান খুজেঁ বের করি।
তে তু বিত্ত্বোর্ধ্বা ঋচ: সাম্নে যজুষ: স্বরমেব প্রাশিণ।।
এখানে স্পস্টতই দেখা যায় ঋক্ সাম ও যজু কে ত্রয়ী বিদ্যা বলা হচ্ছে।
........... ছান্দোগ্য ১/৪/৩
ঋক্ সাম ছাড়া যা কিছু আছে সবই যজু:
...... মিমাংসা সূত্র ২/৩৭
এখান থেকে জানতে পারলাম ঋক্,সাম ছাড়া সবই যজু । এটার অর্থ দ্বাড়ায় মিমাংসা সূত্রও ত্রয়ী বলতে ঋক্, সাম ও যজুকে বুঝিয়েছে। এখানে যেহেতু অথর্ব এর উল্লেখ নাই তাই ত্যানা পেঁচানোর অবকাশ থাকেনা। এর পরেও যারা ত্যানা পেঁচান তাদের জন্য আরো প্রমান দেওয়া হলো।
দেবা বৈ মৃত্যোর্বিভ্যতস্ত্রয়ীং বিদ্যং প্রবিশন।।
তারপর তহারা ঋক্, সাম, যজু স্বরের মধ্যে প্রবেশ করলো।
.........ছন্দোগ্য ১/৪/২
ত্রয়ো বেদা এত এব বাগের ঋগ্ বেদো মনো যজুর্বেদ: প্রাণ: সামবেদ
তিনটিবেদের মধ্যে ঋগ্বেদ বাক্যের সহিত তুলনীয়। সামবেদ প্রাণের সহিত তূলনীয় এবং যজুর্বেদ মানের সঙ্গে তুলনীয়।
............ বৃহদারন্যক ১/৫/৫
উপরোক্ত মন্ত্র দুটিতে স্পস্ট করে ত্রয়ো বিদ্যা উল্লেখ রয়েছে। এটাতে প্রমান হয় অথর্ব ত্রয়ো বিদ্যার মধ্যে পড়েনা।
আরেকটা ত্যানা হিসাবে ঋগ্বেদের ১০/৯০/০৯ মন্ত্রের রেফারেন্স ব্যবহার করা হয়। এই মন্ত্রে উল্লেখিত ছন্দকে তারা অথর্ববেদ হিসাবে ধরেন। আসুন দেখি ছন্দ সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
ষড়ঙ্গ্যান্যঙ্গানি
ছয়টি বেদাঙ্গ
১) শিক্ষা
২) ব্যাকরন
৩) ছন্দ: ঋক্ ও সাম সংহিতার সব মন্ত্রই ছন্দোবদ্ধ। ঋগ্বেদের শাংখায়ন শ্রৌতসুত্রে ছন্দের কথা উল্লেখ আছে।
৪) নিরুক্ত
৫) জ্যোতিষ
৬)কল্প
এখানে দেখলাম ছয়টি বেদাঙ্গের একটি হচ্ছে ছন্দ।
এখন দেখে নেওয়া যাক সেই ঋগ্বেদের ১০/৯০/০৯ নং মন্ত্রটি:
তস্মাদ্যজ্ঞৎ সর্বহূত ঋচ: সামানি জজ্ঞিরে।
ছন্দাংসি জজ্ঞিরে তস্মাদ্যজুস্তস্মাদজায়ত।।
অনুবাদ: সর্বাত্মক পুরুষ হোম দ্বারা যুক্ত আর উহা থেকে ঋক্ আর সাম দ্বারা উৎপন্ন হয়েছে। উনার নিকট থেকে গায়ত্রী আদি ছন্দ উৎপন্ন হয়েছে। উনার থেকে যজুর্বেদও উৎপন্ন হয়েছে।
........... ঋগ্বেদ ১০/৯০/০৯
এখানে রামগোবিন্দ ত্রিবেদী তার অনুবাদে ছন্দই রেখেছেন, অথর্ববেদ বানান নাই।
এখন আসুন কৌষিতকি উপনিষধে কি বলা রয়েছে?
আমরা কৌষিতকি ব্রাহ্মণের কৌষিতকি উপনিষধে দেখতে পেলাম বেদত্রয় বলিতে অথর্ববেদকে বোঝায় না।
উপনিষদের প্রমান ছাড়াও ব্রাহ্মণ থেকে একটি প্রমান দ্বাড় করালাম
যমৃষস্ত্রয়ীবিদ্যে বিদুঃ ঋচঃ সামানি যজুংষি।
.
এখানে স্পস্ট করেই বলে দিয়েছে ত্রয়ী বিদ্যা বলিতে ঋগ্বেদ, সামবেদ ও যজুর্বেদ।
.... তৈতরীয় ব্রাহ্মণ ১/২/১/২৬
এখানে অথর্ববেদের নাম নাই। তাই ত্রয়ী বিদ্যায় অথর্ববেদ ঢোকানোর কোনো অবকাশ নাই।
তথ্য সংযুক্তি চলমান থাকবে:
No comments:
Post a Comment