Sunday, May 30, 2021

”ভ্রষ্টাস্ততে ভাগবতা ভবন্তি” এর সত্যতা উন্মোচন:

অত্রি সংহিতার  ভ্রষ্ট শব্দটি নিয়ে বহুদিন পরে গাঞ্জর্ষি পরম্পরার দয়াসমাজিরা আনন্দ করার সুযোগ পেয়েছে বলে তাদের আনন্দ আর ধরছেনা। আসুন দেখে নেই দয়াসমাজি কতৃক পোস্টকৃত শ্লোক ও পঞ্চানন তর্করত্নের অনুবাদটি:



এই দয়াসমাজিরা নিয়মিতই বিভিন্ন বিধর্মিকৃত বাংলা অনুবাদ কিংবা সেক্যুলার টাইপ বাংলা অনুবাদ ইত্যাদি ব্যবহার করে সাধারন হিন্দুদের বিভ্রান্ত করে থাকেন ও তাদের দলে টানেন। প্রকৃত অনুবাদ দেওয়ার পূর্বে আসুন বাংলায় অনুবাদকারি পঞ্চনন তর্করত্নের সম্পর্কে চিন্তা করে দেখি।


) শিব মহাপুরানের দ্বাদশ(১২) সংহিতায় জ্ঞান সংহিতা নাই, কিন্তু তার শিবমহাপুরানে জ্ঞান সংহিতা নামক একটি সংহিতার আমদানি দেখা যায় এটা প্রমান করে পঞ্চানন তর্করত্ন মহাশয় নিজের ইচ্ছেমত শ্লোকসহ  অনুবাদ বসিয়েছেন। 





আসুন দেখে নেই দ্বাদশ সংহিতাগুলি কি কি: 


শিব পুরানের দ্বাদশ সংহিতার একটা ক্রম আছে যা শ্লোকের মাধ্যমে বিদ্যমান:


विघ्नेश्वर तथा रौद्रं वैनायक मनुत्तमम्। भौमं मात्र पुराणं च रूद्रैकादशं तथा।
कैलाशं शत्रूद्रं कोटि रूद्राख्यमेव च। सहस्रकोटि रूद्राख्यंवायुवीय ततःपरम्
धर्मसंज्ञं पुराणं चेत्यैवं द्वादशः संहिता। तदैव लक्षणमुदिष्टं शैवं शाखा विभेदतः


1. विघ्नेश्वर संहिता 2. रुद्र संहिता 3. वैनायक संहिता 4. भौम संहिता 5. मात्र संहिता 6. रूद्रएकादश संहिता 7. कैलाश संहिता 8. शत् रूद्र संहिता 9. कोटि रूद्र संहिता 10. सहस्र कोटि रूद्र संहिता 11. वायवीय संहिता 12. धर्म संहिता


বিধ্যেশ্বর তথা রৌদ্রং বৈনায়কমনুত্তমম্। ভৌমন মাত্র পুরাণঞ্চ রুদ্রৈকাদশকং তথা।।৪৫।।

কৈলাশং শতরুদ্রঞ্চ কোটিরুদ্রাখ্যমেব চ। সহস্রকোটি রুদ্রাক্ষবায়বীয় তত: পরম্।।৪৬।।

ধর্মসংজুুং পুরাণঞ্চেত্যেবং দ্বাদশ সংহিতা:: ।।৪৭।।

তদৈব লক্ষমুদিষ্ট শৈবং শাখা বিভেদত:।।৫১।।


১) বিধ্যেশ্বর সংহিতা ২) রুদ্র সংহিতা ৩) বৈনায়ক সংহিতা ৪) ঔম (ওমা) সংহিতা ৫) মাতৃক সংহিতা

৬) রুদ্রাকাদশ ৭) কৈলাশ সংহিতা ৮) শতরুদ্র সংহিতা ৯) কোটি রুদ্র সংহিতা ১০) সহস্রকোটিরুদ্র সংহিতা ১১) বায়বীয় সংহিতা ১২) ধর্ম সংহিতা।



খ) ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে শ্লোক সংখ্যা ১৮০০০ কিন্তু পঞ্চানন তর্করত্ন মহাশয়ের অনুবাদকৃত বাংলা ভাষ্যে ২৪০০০শ্লোকসহ অনুবাদ পাওয়া যায় ৬০০০শ্লোক অতিরিক্ত ঢুকিয়েছেন এটাও প্রমান করে পঞ্চানন তর্করত্ন মহাশয় ইচ্ছেমত বিকৃত করেছেন ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান



আমরা পঞ্চনন তর্করত্নের বিষয়ে মোটামুটি একটা ধারনা পেলাম। এখন ফিরে আসি অত্রি সংহিতায়।ভ্রষ্টাস্ততে ভাগবতা ভবন্তি”  এই শ্লোকের কোথাও বৈষ্ণব কথা লেখা নাই। তার মানে বৈষ্ণব বিদ্বেষী পঞ্চনন তর্করত্ন নিজে এই কাজটি করেছিলেন সাধারন সনাতন ধর্মাবলম্বীদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য। এখন দেখে নেই হিন্দি অনুবাদে কি বলছে


এখানে স্পস্ট দেখা যাচ্ছে ভ্রষ্টাস্ততে ভাগবতা ভবন্তি” এই শ্লোকের অর্থ বৈরাগী করেছেন। বৈরাগীরা গুরুপরম্পরা মানেন না। গুরুপরম্পরা না মানা সকলকে উদ্দেশ্য করেই এই শ্লোকটি উদৃত করা হয়েছে সে কালি উপাসক হোক আর সে  কৃষ্ণ উপাসক হোক  কিংবা সে বিষ্ণু/শিব উপাসক হোক। যারা গুরু পরম্পরা মেনে বিষ্ণু/কৃষ্ণ/কালি/শিব উপাসনা/সাধনা করেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি।


সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সাধারনত গুরুপরম্পরা মেনেই ধর্ম পালন করে আসছে। কিন্তু বর্তমানে এক গাঞ্জর্ষি পরম্পরার দয়াসমাজিরা কোনো গুরু পরম্পরা মানেনা। অত্রি সংহিতার এই শ্লোকটি তাদের উপরেও বর্তায়।



Saturday, May 29, 2021

মহাভারতে কৃষ্ণের যোগযুক্তের মাধ্যমে গীতাদানের ব্যাক্ষা:




মহাভারতে বর্ণিত যোগযুক্তের অযুহাত টেনে দয়াসমাজিরা প্রায়শই বলে থাকেন গীতার জ্ঞাণ কৃষ্ণ দেয়নি। কৃষ্ণ ঈশ্বরের সহিত যুক্ত হয়ে গীতার জ্ঞাণ দিয়েছিলেন। গীতার জ্ঞান কৃষ্ণের নয়, ঈশ্বর প্রদত্ত।

 

আসুন দেখে নেওয়া যাক দয়াসমাজিদের অজুহাতের শ্লোক-অনুবাদে কি বলা হয়েছে?


পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া

ইতিহাসস্তু বক্ষ্যামি তস্মিন্নর্থে পুরাতনম্ ৷৷


অনুবাদ: তৎকালে আমি যোগযুক্ত হইয়া পরব্রহ্মের বিষয় বলিয়াছিলাম, এখন সেই বিষয়ে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি

………… ১৩/১৭ অশ্বমেদিকা পর্ব



এই শ্লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে অনেকেই অভিযোগ তোলেন যে কৃষ্ণ ঈশ্বর নন, ঈশ্বরের সহিত যুক্ত হয়ে গীতা দান করেছিলেন। 



আসুন দেখে নেওয়া যাক অমরকোষে যোগ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?


যোগ: সন্নহনোপায়ধ্যানসনগতিযুক্তিষু



এখানে যোগ বলিতে ধ্যান বোঝানো হয়েছে। ঈশ্বরের জন্য অথবা তার ইচ্ছের জন্য। যোগযুক্ত হচ্ছে  নির্বিঘ্নে যেকোনকিছুর  জন্য তার ঐশ্বরিক ইচ্ছেকে ব্যবহার করা  । 


আসুন যোগ সম্পর্কে পাতঞ্জল যোগদর্শন কি বলে দেখে নেই


যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধ:

সুত্রানুবাদ: চিত্তের বৃত্তিগুলির নিরোধ হলো যোগ।

................. ১/২, পাতঞ্জল যোগদর্শন।



এখন আমরা দেখে নেই মহাভারতে উল্লেখিত টিকাকারের মতে যোগযুক্তেন শব্দটা বলতে কি বোঝানো হয়েছে?




যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতেন (ভারতকৌমুদী টীকা) এখানে যোগযুক্ত অর্থ একাগ্রতার সহিত ৷ 


এখন আসুন একটু দেখে নেই গীতা কি বলেছে






এখানেও(৮/২৭) এ যোগযুক্ত শব্দের অর্থে বলা হচ্ছে ’সমাহিত চিত্ত’ ।


উপরোক্ত রেফারেন্সগুলি থেকে জানলাম যোগযুক্ত কথার অর্থ সকল চিন্তা বাদ দিয়ে একাগ্রতার সহিত মনোনিবেশ করা।


আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে অপর কেউ নয় স্বয়ং কৃষ্ণই গীতা দান করেছিলেন। 


কিন্তু এখন কেনো গীতা দান করতে চাইছেন না?


এক্ষেত্রে তখন কৃষ্ণের সংকল্প ছিলো অর্জুনকে গীতা দান করার কিন্তু এখন সেই সংকল্প নাই কারন অর্জুন কতৃক কৃষ্ণের যোগযুক্তেন শব্দের আগেপিছের শ্লোকানুবাদ গুলি থেকে জানা যায়।

 

অর্জুন কতৃক কৃষ্ণকে উক্তি,


ততপ্রতীতকৃষ্ণেন সহিতপান্ডবোহর্জ্জুন:

নিরীক্ষ্য তাং সভাং রম্যামিদং বচনমব্রবীৎ।। ।।


অনুবাদতাহার পর পান্ডুনন্দন অর্জুন  কৃষ্ণের সহিত মিলিত হইয়া সেই মনোহর  

সভা দর্শন করিয়া সন্তুষ্টচিত্তে এই কথা বলিয়াছিলেন

………… /১৭ অশ্বমেদিকা পর্ব



যত্তু তদ্ভবতা প্রোক্তং পুরা কেশবসৌহৃদাৎ

তৎসর্ব্বং পুরুষব্যাঘ্রনষ্টং মে ব্যগ্রচেতস:


অনুবাদপুরুষশ্রেষ্ট কেশবআপনি সৌহার্দ্দ্যবশতপূর্ব্বে যে সকল কথা বলিয়াছিলেনআমি যুদ্ধে আসক্তচিত্ত হওয়ায় সে সমস্তই আমার লুপ্ত হইয়া গিয়াছে

………… /১৭ অশ্বমেদিকা পর্ব

 


মম কৌতূহলং ত্বস্তি তেষ্বর্থেষু পুনপুন:

ভবাংস্ত দ্বারকাং গন্তা নচিরাদিব মাধব!


মাধবসেই সকল বিষয় পুনরায় শুনিবার জন্য আবার আমার কৌতুহল হইতেছে কারনআপনি অচিরকালমধ্যেই দ্বারকায় চলিয়া যাইবেন

…………… /১৭ অশ্বমেদিকা পর্ব।


যোগযুক্তেন শব্দ শ্লোকের পরে  কৃষ্ণ কতৃক অর্জুনকে বলা কথন


অর্জুনকে কৃষ্ণ প্রদত্ত পরবর্তি শ্লোক-অনুবাদ থেকে জানা যায়  ‘ ‘তুমি যে বৈমত্যবশত: সে সকল মনে রাখিতে পার নাই, তাহা আমার অপ্রিয় হইয়াছে। পান্ডুনন্দন! নিশ্চয় তুমি আমার সেই সকল বাক্যে বিশ্বাস কর নাই, অথবা তুমি নিশ্চয়ই দুর্ম্মেধা।’’ 


কোনো রাজসভায় একাগ্রতার সহিত মনোনিবেশ দ্বারা গীতামৃত দান করা সম্ভব নয়। তাছাড়া অর্জুনের বিশ্বাস হয়নি ও কৌতুহলের উপর গীতামৃত পুনরায় দেওয়া সঠিক হবেনা এটাই তৎকালিন কৃষ্ণের বিবেচ্য ছিলো।

 

একাগ্রতা কিংবা ধ্যান ছাড়া কি গীতার জ্ঞান দেওয়া যায়না? একাগ্রতা কিংবা ধ্যান বিহীন অবস্থায় অর্জুন যতোটুকু ধারন করতে পারতেন ততোটুকুই পরবর্তিতে তাকে দেওয়া হয়েছিলো।


পূর্বমপ্যেতদেবোক্তং যুদ্ধকাল উপস্থিতে

ময়া তব মহাবাহো তস্মাদত্র মনঃ কুরু।।



অনুবাদ: মহাবাহু! পূর্বেই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় উপস্থিত হইলে, আমি তোমার নিকট ভগবদগীতাস্বরূপ এই বিষয়ই বলিয়াছিলাম, অতএব তুমি এই বিষয়ে মনোনিবেশ কর

…………… /৬৬ অশ্বমেদিকা পর্ব


এখানেও দেখা যায় অর্জুনকে মননিবেশ করতে বলেছেন। কারন অর্জুনের মন যোগের উপযোগী ছিলোনা।

 

এখন দেখা যাক গীতা কি বলে?


শ্রীভগবানুবাচ

ময়া প্রসন্নেন তবার্জ্জুনেদং রূপং পরং দর্শিতমাত্মযোগাৎ

তেজোময়ং বিশ্বমনন্তমাদ্যং যন্মে ত্বদন্যেন দৃষ্টপূর্ব্বম্।।


অনুবাদ: শ্রীভগবান্ বলিলেন, আমি প্রসন্ন হইয়া স্বকীয় যোগ প্রভাবেই এই তেজোময়, অনন্ত, আদ্য, বিশ্বাত্মক পরমরূপ তোমাকে দেখাইলাম; আমার এই রূপ তুমি ভিন্ন পূর্ব্বে কেহ দেখে নাই

……………. ১১/৪৭ গীতা


গীতাতেই স্পস্ট করে দিয়েছে এই যোগ প্রভাব কৃষ্ণের স্বকীয় তারপরেও যোগযুক্ত নিয়ে ত্যানা প্যাচানোর অর্থ আপনি গীতা মানেন না। ইচ্ছাকৃতভাবে গীতাকে বিকৃত করার ধান্ধাই ব্যাস্ত।


আসুন দেখি অর্জুনের সহিত আলাপ করে দ্বারকা যাওয়ার সময় পথমধ্যে ভৃগুঋষির পুত্র ঋষি উতঙ্কের সহিত সাক্ষাত হওয়ার সময় তাদের কথোপকথন গুলি কি কি


কৃষ্ণ ভৃগুবংশিয় উতঙ্ক ঋষিকে বললেন,


বাসুদেব উবাচ!

তমো রজশ্চ সত্ত্বঞ্চ বিদ্ধি ভাবাম্মদাশ্রয়ান্।

তথা রুদ্রান্ বসূন্ বাপি বিদ্ধি মৎপ্রভবান্ দ্বিজ!

অনুবাদ: কৃষ্ণ বলিলেন- ‘ব্রাহ্মণ! সত্ত্ব, রজ তম – এই তিনটি গুণ আমাতে রহিয়াছে বলিয়া অবগত হউন এবং রুদ্রগণ ও বসুগণ আমা হইতে উৎপন্ন হইয়াছেন বলিয়া মনে করুন।

…………… শ্লোক নং ২, অধ্যায় নং ৬৭, অশ্বমেদিকা পর্ব।

 


সদসচ্চৈব যৎপ্রাহুরব্যক্তং ব্যক্তমেব চ।

অক্ষরঞ্চ ক্ষরঞ্চৈব সর্বমেতম্মদাত্মকম্।।

অনুবাদ: মুনিরা যে যে পদার্থকে সৎ, অসৎ, ব্যক্ত, অব্যক্ত, অক্ষর ও ক্ষর বলেন, এই সমস্তই আমার স্বরুপ।।

………… শ্লোক নং ০৫, অধ্যায় নং ৬৯, অশ্বমেদিকা পর্ব।

 


তৈস্তৈর্বেষৈশ্চ রুপৈশ্চ ত্রিষু লোকেষু ভার্গব!।

অহং বিষ্ণুরহং ব্রহ্মা শক্রোহথ প্রভবাপ্যয়:।

অনুবাদ: ভৃগুনন্দন! আমি ত্রিভুবনে সেই সেই বেসে ও সেই সেই রুপে বিষ্ণু, ব্রহ্মা ও ইন্দ্র এবং উৎপত্তি ও লয়ের কারন হইয়া থাকি।

………… ১৪নং শ্লোক, ৬৯নং অধ্যায় অশ্বমেদিকা পর্ব।

 


ভূতগ্রামম্য সর্বস্য স্রষ্টা সংহার এব চ।

অধর্ম্মে বর্ত্তমানানাং সর্বেযামহমচ্যুত:।

অনুবাদ: আমি সমস্ত প্রাণীর সৃষ্টিকর্তা ও সংহার কর্তা এবং আমি অধর্ম্মে প্রবৃত্ত সকলেরই মধ্যে অচ্যুতরুপী হইয়া থাকি।

………… ১৫নং শ্লোক, ৬৯নং অধ্যায় অশ্বমেদিকা পর্ব।



মানুষ্যে বর্ত্তমানে তু কৃপণাং যাচিতা মযা।

ন চ তে জাতসম্মোহা বচোহগৃহ্নন্ত মোহিতা:

 

অনুবাদ: এখন আমার মনুষ্যরুপ রহিয়াছে; সুতরাং আমি মনুষ্যের ন্যায় কৌরবগণের নিকটে দীনভাবে সন্ধির প্রার্থনা করিয়াছিলাম; কিন্তু তাঁহারা মোহিত হইয়া আমার সে বাক্য গ্রহণ করেন নাই।

………… ২০নং শ্লোক, ৬৯নং অধ্যায়, অশ্বমেদিকা পর্ব্।


কৃষ্ণ ঈশ্বর না হলে কৃষ্ণের এই কথাগুলি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কৃষ্ণের কথা কি মিথ্যা হতে পারে? এখন আসুন দেখি তখন ঋষি উতঙ্ক কি বলেছিলেন,



উতঙ্ক ঋষি কৃষ্ণকে বললেন

হিরণ্যগর্ভরুপায় সংসারোত্তারণায় চ।

পুরুষায় পুরাণায় শান্তশ্যামায় তে নম:

অনুবাদ: ভগবান! আপনি ব্রহ্মস্বরুপ, সংসার হইতে উ্ধারকারী, পুরাণপুরুষ, শান্ত-মুর্ত্তি ও শ্যামবর্ণ- আপনাকে নমস্কার।

………… শ্লোক নং ০৮, অধ্যায় নং ৭০, অশ্বমেদিকা পর্ব।

 


সর্ব্ববেদৈকবেদ্যায সর্ববেদমযায় চ।

বাসুদেবায নিত্যায় নমো ভক্তিপ্রিযায তে।

অনুবাদ: আপনি সমস্ত বেদের একমাত্র বেদ্য, সর্ব্ববেদময়, বাসুদেব, নিত্য এবং ভক্তের প্রিয়; আপনাকে ননমস্কার।

…………… ১০নং শ্লোক, ৭০ অধ্যায়, অশ্বমেদিকা পর্ব।



আসলে কৃষ্ণের মুখনিসৃত কথা মিথ্যা হতে পারেনা,  আপনার ধারনা মিথ্যা।

আসুন দেখি এই পর্বেই মহর্ষি উতঙ্কের সহিত  কথোপকথনের পরে যুধিষ্টির মহারাজের সহিত কৃষ্ণের কি কথপোকথন হয়েছিলো?


কৃষ্ণ যুধিষ্টির মহারাজকে বললেন


অহমাদির্হি দেবানাং সৃষ্টা ব্রহ্মদযো মযা।

প্রকৃতিং স্বামবষ্টভ্য জগৎ সর্ব্বং সৃজ্ম্যহম্


অনুবাদ: আমি দেবগণের আদি, আমি ব্রহ্মাদি দেবগণকে সৃষ্টি করিয়াছি এবং আমি নিজের প্রকৃতিকে অবলম্বন করিয়া সমগ্র জগৎ সৃষ্টি করিয়া থাকি।

………… ৩৮নং শ্লোক, ১১৭ অধ্যায় অশ্বমেদিক পর্ব।

 

 

মানুষ্যং ভাবাসাপন্নং যে মাং গৃহ্নন্ত্যবজ্ঞায়া।

সংসারন্তর্হি তে মুঢ়াস্তির্য্যগ্যোনিস্বনেকশ:


অনুবাদ: যাহারা অবজ্ঞাপূর্ব্বক আমাকে মানুষ বলিয়া মনে করে, সেই মূর্খেরা সংসারমধ্যে অনেকবার তির্য্যগ্যোনিতে জন্মিয়া থাকে।

…………… ২৯নং শ্লোক ১১৭অধ্যায়, অশ্বমেদিকা পর্ব।

 

 

চতুরাশ্রমধর্ম্মোহহং চাতুর্হোত্রফলাশন্:।

চতুর্মুর্ত্তিশ্চতুর্যজ্ঞশ্চতুরাশ্রমভাবন:।


অনুবাদ: আমি ব্রহ্মচর্য্যপ্রভৃতি চারিটি আশ্রমের ধর্ম্মস্বরুপ, চাতুর্হোত্রযজ্ঞের ফল ভোগ করি, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, ও প্রজাপতি এই চারিটি আমার মুর্তি এবং ব্রহ্মচর্য্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও ভিক্ষু এই চারিটি আশ্রম আমিই সৃষ্টি করিয়াছি।

………… ৫০নং শ্লোক, ১১৭অধ্যায়, অশ্বমেদিক পর্ব।

 

তখন যুধিষ্ঠির মহারাজ কৃষ্ণকে বলেছিলেন



যুধিষ্টির উবাচ!

ভগবন্! দেবদেবেশ! শ্রোতুং কৌতূহলং হি মে।

শুভস্যাপ্যশুভস্যাপি ক্ষয়বৃদ্ধী যথক্রমম্।


অনুবাদ: যুধিষ্ঠির বলিলেন- ‘ভগবন্ দেবদেশ্বর! মঙ্গলই হউক বা অমঙ্গলই হউক, তাহার ক্ষয় ও বৃদ্ধির হেতু যথাক্রমে শুনিবার জন্য আমার কৌতুক জন্মিয়াছে।

১নং শ্লোক, ১২০নং অধ্যায়, অশ্বমেদিকা পর্ব।



শিক্ষক ক্লাসের মধ্যে বর্ণনা করছেন শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ, শিক্ষককে কিভাবে সম্মান করা উচিৎ,  এটা বর্ণনা করায় কি শিক্ষকের শিক্ষকত্ব নস্ট হয়ে যায় নাকি? গাঞ্জর্ষি পরাম্পরার দয়াসমাজিদের এতোটুকু বোঝার ক্ষমতাই নাই আবার সারাদিন ফেসবুকে বেদ-বেদ বলে চিল্লাচিল্লী করে যাহা নিতান্তই হাস্যকর। 


অনেকে আবার বলেন কৃষ্ণ নিজে বলেছেন তিনি এই জ্ঞান দিতে সক্ষম নন। তাহলে তিনি ঈশ্বর কি করে হন।


এতদ্ বিস্তরতঃ সর্বং কথয়স্ব মমানঘ

কুতূহলমিদং মহ্যং নুদ ভানুর্যথা তমঃ।।

 

অনুবাদঃ নিস্পাপ মহর্ষে! আপনি এসব আমাকে বিস্তারিত ভাবে বলুন এজন্য আমার মনে অত্যন্ত কৌতুহল হচ্ছে সূর্যদেব যেমন আধাঁর দূর করেন, সেইভাবে আপনি আমার কৌতুহল নিবারন করুন

 

 

রাঘবস্য বচঃ শ্রুত্বা সংস্করালঙ্কৃতং শুভম

অথ বিস্ময়মানস্তমগস্ত্যঃ প্রাহ রাঘবম্।।

 

অনুবাদঃ শ্রীরঘুনাথের এই বাণী পদসংস্কার, বাক্যসংস্কার অর্থসংস্কার দ্বারা অলংকৃত ছিল তা শুনে শ্রীঅগস্ত্য এই ভেবে খুবই বিস্মিত হলেন যে, ইনি সর্বজ্ঞ হয়েও অজ্ঞানের মতো আমার কাছে জানতে চাইছেন তারপর তিনি শ্রীরামকে বললেন

............... ৮,৯ নং শ্লোক, ৪র্থ স্বর্গ, উত্তরকান্ড।


উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝায় গেলো গীতার জ্ঞাণ কৃষ্ণেরই দেওয়া।


তথ্য সংযুক্তি চলবে: