প্রতিক উপাসনা:
সনাতন ধর্মাবলম্বী নন কিংবা সনাতন ধর্ম থেকে বেরিয়ে যেতে চায় তারাই শুধুমাত্র ব্রেনওয়াশ হয়ে বলতে থাকেন ঈশ্বর সাকার হয়না, ঈশ্বরের প্রতিমা হয়না। এমনও হতে পারে তারা ইশ্বরের নিরাকার অস্তিত্বের মন্ত্রগুলিই বারংবার পড়তে পড়তে সনাতনী ইশ্বর সাকার রুপ ধারন করতে পারেন ইশ্বরের উদ্দেশ্যে প্রতিক উপাসনা করা যায় এই ভাব ভুলতে বসেছেন ।
আসুন দেখা যাক ইশ্বর যে সাকার হয় তার কিছু প্রমান দেখা যাক
ঈশ্বর সাকার:
ধিষ্ব বজ্রং গভস্ত্যো রক্ষেহত্যায় বজ্রিব:। সাসহীষ্ঠাঅভি স্পৃধ।।১৮
অনুবাদ: হে বজ্রধারী ইন্দ্র, তুমি রাক্ষসকে নাশ করার জন্য নিজ
হাতে বজ্র ধারন করো আর শত্রুদের ভালোভাবে পরাজিত করো।
……… ঋগ্বেদ ৬/৪৫/১৮ (রামগোবিন্দ ত্রিবেদী ভাষ্য)
রুপং রুপং
মঘবা বোভবীতি মায়াঃ কৃন্বানস্তন্বং পরি স্বাম্।
অনুবাদঃ ইন্দ্র যে রুপ কামনা করেন ঐরুপ ধরেন। মায়াবী ইন্দ্র নিজ শরীরকে নানাবিধ বানান।
.......... ঋগ্বেদ ৩/৫৩/৮
বিশ্বামিত্রা অরাসত ব্রহ্মেন্দ্রায় বজ্রিণে। করদিন্নঃ সুরাধসঃ।
অনুবাদঃ বিশ্বামিত্র
বংশীয়েরা বজ্রহস্ত ইন্দ্রকে স্তুতি করেছে, ইন্দ্র আমাদের সৌম ধন যুক্ত করুন।
......... ঋগ্বেদ ৩/৫৩/১৩
উপরোক্ত মন্ত্রগুলি থেকে দেখলাম ঈশ্বরের হস্ত রয়েছে যাহা দিয়ে বজ্র ধারন করেন এবং বিশ্বামিত্র বংশজরা সাকার উপাসনা করতেন।
আচ্ছা যদি প্রতিক উপাসনা নাই থাকে তবে ইশ্বরের উদ্দেশ্যে হব্য কোথায় দিবেন?
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।
তদহং ভক্ত্যুপহৃত্মশ্নামি প্রযতাত্মনঃ।।
অনুবাদ: যিনি আমাকে পত্র, পুস্প, ফল, জল, যাহা কিছু ভক্তিপূর্ব্বক দান করেন, আমি সেই শুদ্ধচিত্ত ভক্তের ভক্তিপূর্ব্বক প্রদত্ত উপহার গ্রহণ করিয়া থাকি।
…………… ৯/২৬ গীতা
যত্র বেথ বনস্পতে দেবানাং গুহ্যা নামানি। তব্র হব্যানি গাময়।
অনুবাদঃ হে বনস্পতি, তুমি যে স্থানে দেবের গুহ্য নাম জানো, সেখানে হব্য প্রদান করো।
....... ঋগ্বেদ ৫/৫/১০
ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের প্রিয় জিনিস নিশ্চয় ড্রেণে দিবেন না। এজন্যই প্রতিক উপাসনা প্রয়োজন।
ইশ্বরের যে প্রতিমা হয়না এই কথাটা পুরোপুরি ভূল, দেখে যাক বেদে ঈশ্বরের প্রতিমা:
অনুবাদঃ হে অগ্নিদেব হাজারও প্রতিমা আপনার।
মন্ত্রটি অগ্নিদেবকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে।
....... যজুর্বেদ ১৫/৬৫
বেদে অগ্নি দেবের অনেক স্তুতি রয়েছে। কিছু যায়গায় রুদ্রদেব কেউ অগ্নি দেবের রুপ বলা হয়েছে।
ছবিটি অগ্নি দেবের। পটেশ্বর, মহারাষ্ট্র।
ছবিতে অগ্নিদেবের সাত হস্ত, দুই মস্তক (একটা মনুষ্যাকৃতির ও আরেকটি ষাড় আকৃতির) তিন পা ( দুটি মনুষ্যা কৃতির ও একটি ষাড় আকৃতির)।
মা অসি প্রেমা অসি প্রতিমা অসি
........ ৪/৫/৫ তৈত্তিরীয় আরন্যক
অথৈতমাত্মন: প্রতিমাম্ অসৃজত যদ্ যঞ্জম্
.............. ১১/০১/০৮/০৩ শতপথ ব্রাহ্মণ
এখানে স্পস্টভাবেই প্রতিমার উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক প্রতীক সম্পর্কে বেদে কি বলা হয়েছে?
কনীনকেব বিদ্রধে নবে দ্রুপদে অর্ভকে। বভ্রূ যামেষু শোমেষু শোভেতে।।
হে ইন্দ্র, দৃঢ়, নতুন এবং ক্ষুদ্র দ্রুমাখ্য স্থানে স্থিত কমনীয় শাল-ভঞ্জিকা পুত্তলিকার মতো তোমার পিঙ্গলবর্ণ দুটি ঘোড়া যজ্ঞে শোভা পায়।………… ঋগ্বেদ ৪/৩২/২৩
শুন:শেপো যমহ্বদৃগৃভীতস্ত্রিষবাদিত্যং দ্রুপদেষু বদ্ধ:। অবৈনং রাজা বরুণ: সমৃজ্যাদ্বিদ্বাঁ অদদ্বো বি সুমোক্তু পাশাান্।।
শুনঃশেপ ঘৃত এবং তিন কাঠের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে অদিতির পুত্র বরুণকে আহ্বান করেছিলেন। এজন্য বিদ্বান এবং দয়ালু বরুণ শুনঃশেপ কে মুক্ত করেছিলেন, তার বন্ধন ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
………… ১/২৪/১৩ ঋগ্বেদ
নৃধুতো অদ্রিষুতো বর্হিষি প্রিয়: পতির্গবাং প্রদিব ইন্দুর্ঋত্বিয়:।
পুরন্ধিবান্মানুষো যজ্ঞসাধন: শুচির্ধিয়া পবতে সোম ইন্দ্র তে।।
অনুবাদ: যজ্ঞানুষ্ঠানে উপযোগী ইন্দ্র, কর্মসিদ্ধি দ্বারা শোধিত, পাথর দ্বারা অভিভূত, দেব দের কর্তা, গোপতি, প্রাচীন, পাত্র দ্বারাও বহনযোগ্য, বহুকর্ম করা, মনুষ্যদের যজসাধক । আর দশাপবিত্র থেকে শুদ্ধ সোম নিজ ধারা দ্বারা অন্ত থেকে পাত্র থেকে তোমার জন্য ক্ষরিত হন।
………… ০৯/৭২/৪ ঋগ্বেদ
প্রভু ইন্দ্র, পাথর দ্বারা প্রকাশ পান।
No comments:
Post a Comment