Thursday, April 1, 2021

যজ্ঞ বিরোধী শৈব

 যজ্ঞ বিরোধী শৈব:




পুরানকে বিকৃত বলা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দ্বাড়িয়েছে। যে যে কারন দেখিয়ে বিকৃত বলা হচ্ছে তাদের মধ্যে বেশি ফোকাসিং করা হচ্ছে সূর্য্য পুরান, বায়ু পুরান দিয়ে। সহাভারতে অস্টাদশ পুরানের কথা রয়েছে কোনো চায়ের দোকানে বসে মনের মাধুরী মিশিয়ে কুৎসা রটনা করে তার নাম পুরাণ বলে চালিয়ে দেওয়াগুলি অস্টাদশ পুরানের মধ্যে পড়েনা। সূর্য্য পুরান-বায়ু পুরান অস্টাদশ পুরানের মধ্যে পড়েনা। পুরাণ নিয়ে একদল আছে যারা ব্রাহ্মণকে পুরান বলেন তৈতরিয় আরণ্যকের একটি মন্ত্র দিয়ে। তারা কখনো পুরো মন্ত্রটি প্রকাশ করেন না। আংশিক করে প্রকাশ করে থাকেন। পুরাণ ব্রাহ্মণ কখনো নয়। পুরাণ ব্রাহ্মণ এই অভিযোগটি পুরো পুরি অসত্য। কারন পুরাণ বলতে অস্টাদশ পুরানকে বোঝায়। ব্রাহ্মণ আর পুরাণ আলাদা। এবিষয়ে পরবর্তিতে আলোচনা করবো। এখন আসুন সূর্য্য পুরান- বায়ু পুরানের শ্লোকের রেফারেন্স কেনো বারংবার প্রচার করা হয়? সূর্য্য পুরান ও বায়ু পুরানের দুটি শ্লোক রয়েছে যেখানে বৈষ্ণব বিরোধী বক্তব্য রয়েছে স্পস্ট করে। তাই বৈষ্ণব বিরোধীরা এখান থেকে রেফারেন্স নিয়ে মানুষের ব্রেণ ওয়াস করাতে উঠে পড়ে লেগে যায়। মহাভারতে উপপুরান-অতিরীক্ত পুরান এর কথা বলা নাই।


অস্টাদশপুরাণানি ধর্ম্মশাস্ত্রাণি সর্বশ: ।
বেদা: সাঙ্গাস্তথৈকত্র ভারতং চৈকত: স্থিতম্ ।। ৪৫।।
অনুবাদ: অস্টাদশ পুরাণ, সমস্ত ধর্মশাস্ত্র এবং অঙ্গশাস্ত্রের সহিত চারটি বেদ তুলাদণ্ডলম্বিত একপাত্রে ছিলো। আর এই মহাভারত তাহারই অন্য পাত্রে বহিয়াছিলো (তখন মহাভারতের ভারই অধিক হইয়াছিলো।
…………… শ্লোক নং ৪৫, অধ্যায় ০৫, স্বর্গারোহণ পর্ব, মহাভারত।


অস্টাদশপুরানের মধ্যে অশ্লীলতায় ভরা নিয়েও অভিযোগ করা হয়ে থাকে। যাদের যেমন দৃষ্টি তাদের কাছে শাস্ত্র জ্ঞাণ ঐরুপ হয়েই ধরা দেয়। যাকে অশ্লীল বলছেন তাকে গুরুরা অপ্রাকৃত বলেছেন। প্রাকৃত আর অপ্রাকৃত শব্দের পার্থক্য আছে। তারপরেও নব্য শাস্ত্রবিদরা অশ্লীলতার দোহায় দিতেই থাকেন। অশ্লীলতার চোখে দেখলে শিব পুরানে (জ্ঞাণ ও ধর্ম্ম সংহিতা), কুর্ম্ম পুরানের একটি শ্লোক, ভাগবত পুরানের একটি শ্লোক, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানের জন্ম খন্ড, মৎস পুরানের একটি শ্লোক, ব্রহ্মান্ড পুরানের একটি শ্লোক, লিঙ্গ পুরানের একটি করে শ্লোকে অশ্লীলতা বিদ্যমান। অশ্লীশতার পার্সেন্টেজ কতো? সর্বোচ্চ ০.১%। এই ০.১% অপ্রাকৃত ঘটনা প্রকৃতের সহিত মেলালে অশ্লীলই মনে হবে। আপনি অশ্লীলতার দোহায় দিয়ে যদি বলেন আমি পুরাণ পড়বো না তবে পড়বেন কি? বেদ? দেবনগড়ী পড়তে পারেন? আপনি একটা শব্দই পড়তে পারেন না আর বেদ পড়ে উল্টাই দিবেন মনে হচ্ছে। তন্ত্রশাস্ত্র পড়বেন? আপনাদের(শৈব-শাক্তদের) প্রধান তন্ত্র, মহানির্বান তন্ত্রতে স্পস্ট করে বলেছে বেদ কলিতে নির্ব্বিজ্জ মানে অচল পয়সা। আপনি তন্ত্র মানবেন অথচ বেদ বেদ করবেন তার মানে আপনার ভিমরতি হয়েছে। দুটি বিপরীত মুখি। একটি মানলে অন্যটিকে মানতে পারবেন না।


কলৌ তন্ত্রোদিতা মন্ত্রা: সিদ্ধান্তৃর্ণফলপ্রদা:।
শস্তা: কর্ম্মসু সর্ব্বেষু জপযজ্ঞক্রিয়াদিষু ।। ১৪।।
অনুবাদ: কলিকালে তন্ত্রোক্ত মন্ত্র সকল সিদ্ধ ও সত্বর শুভফল বিধায়ক হইয়া থাকে, ঐ সকল মন্ত্র যাবতীয় কম্র্ম্ম এবং জপ যজ্ঞাদিতে প্রশস্ত ।১৪।
……………… দ্বিতীয়োল্লাস: মহানির্বাণ তন্ত্র।


নির্ব্বীর্য্যা: শ্রৌতজাতীয়া বিষহীনোরগ্মা ইব।
সত্যাদৌ সফলা আসন্ কলৌ তে মৃতকা ইব।।১৫।।
অনুবাদ: বিষহীণ বিষধরের অবস্থা যে প্রকার, তাহার ন্যায় এক্ষণে বৈদিক মন্ত্রাদি নির্ব্বীর্য্য; উহারা সত্য প্রভৃতি যুগাধিকারে ফলদায়ক ছিলো এখন মৃতবৎ হইয়াছে।১৫।।
……………… দ্বিতীয়োল্লাস: মহানির্বাণ তন্ত্র।


অন্যমন্ত্রৈ: কৃতং কর্ম্ম বন্ধ্যাস্ত্রীসঙ্গমো যথা ।
ন তন্ত্র ফলসিদ্ধি: স্যাৎ শ্রম এব হি কেবলম্ ।।১৭।।
অনুবাদ: যেরুপ বন্ধ্যানারী- সহবাসে পুত্রলাভ ঘটে না, সেইরুপ তন্ত্রোক্ত মন্ত্র ভিন্ন অন্যান্য মন্ত্র-সহয়তার কর্ম্ম করিলে ক্রিয়াসিদ্ধি হয় না, প্রত্যুত পণ্ডশ্রম হয় মাত্র।। ১৭।।
……………… দ্বিতীয়োল্লাস: মহানির্বাণ তন্ত্র।



যারা সবসময় নিজস্ব তৈরি কৃত পুরানগুলিকে বৈষ্ণব বিরোধী হিসাবে ব্যবহার করেন তাদের তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, বেদে শিব নাই রুদ্র আছে সেই সঙ্গে আরো একটি শিশ্নদেব( লিঙ্গদেব) এর কথা রয়েছে। আপনারা এটাকে সামনে না নিয়ে আসলেও আপনাদের অপপ্রচারের জবাব সত্য প্রচার দিয়েই করবো এখন।



ন যাতব ইন্দ্র জুজুবুর্নো ন বন্দনা শবিষ্ঠ বেধ্যাভি: ।
স শর্ধদর্যো বিষুনস্য জন্তোর্মা শিশ্নদেবা অপি গুর্ঋৃতং ন:।। ৫।।
অনুবাদ: হে ইন্দ্র রাক্ষসগণ যেনো আমাদের হিংসা না করে। হে বলবত্তম ইন্দ্র! রাক্ষসগণ যেনো প্রজাগণ হতে আমাদের পৃথক না করে। স্বামী ইন্দ্র যেনো বিষম জন্তুর বধে উৎসাহিত হন। শিশ্নদেব যেনো আমাদের যজ্ঞ বিঘ্ন না করে।
…………… ঋগ্বেদ ৭ম মন্ডল, ২১সুক্ত, মন্ত্র নং ০৫।



এখানে, (মা শিশ্নদেবা অপি গুর্ঋৃতং ন:) অংশটুকু দ্বারা স্পস্টভাবেই বলা যায় যে লিঙ্গ পুঁজকরা যজ্ঞ বিরোধী তথা বেদ বিরোধী। উপর দিয়ে ফিটফাট ভেতর দিয়ে সদরঘাট।

এখন দেখি নব্যার্য্য সমাজিদের ভাষ্যগুলি কি বলে? প্রথমে আসুন তুলশীরামের ভাষ্যে কি বলে, ওখানে ” মা শিশ্নদেবা অপি গুর্ঋৃতং ন “ এর অর্থ করেছে, কামুক লম্পট লিঙ্গ ক্রিতদাসদের আমাদের নৈতিক আচার ও সততাকে অপবিত্র করতে দিওনা।

এখন আসুন দেখি নব্যার্য্য সমাজের হরিশরন স্বিদ্ধান্ত লঙ্কার কি বলে, উনি ” শিশ্নদেবা অর্থ করেছেন অব্রহ্মচারী লিঙ্গ – অসংযমী পুরুষ। অর্থাৎ অসংযমী পুরুষ যজ্ঞ শে প্রবূত নেহি হোতি।

এখন আসুন দেখি নব্যার্য্য ছাড়া অন্য ভাষ্য যেমন রামগোবিন্দ ত্রিবেদি কি ভাষ্য করেছেন, শিশ্নদেব হামারী যজ্ঞ শে বিঘ্ন না ডালে।


এখন এই লিঙ্গদেব কে? শিবলিঙ্গ নাকি? নাকি রুদ্র লিঙ্গ?



No comments:

Post a Comment