Monday, April 26, 2021

বেদের বরাহ রুপি পরমাত্মা:

বেদের বরাহরুপি পরমেশ্বর:




বেদের বরাহ অবতার আলোচনার পূর্বে চলুন একটু মহাভারত থেকে জেনে নেই বরাহ অবতার সম্পর্কে:




                             ছবিটি কালি প্রসন্ন সিংহের মহাভারত থেকে নেওয়া




হংস:, কূর্মশ্চ মৎস্যশ্চ প্রদুর্ভাবা দ্ধিজোক্তম।। ১০৩।।

বরাহো নরসিংহশ্চ বামনো রাম ইব চ।

রামো দাশারথিচৈব সাত্বত: কল্কিরেব চ।।১০৪।।


অনুবাদ:  দ্বিজশ্রেষ্ঠ! হংস, কূর্ম, মৎস্য, বরাহ, নরসিংহ, বামন, পরশুরাম, দশরথনন্দন রাম, যদুবংশি শ্রীকৃষ্ণ তথা কল্কি- যে সব অবতার ।

.................... ১০৩-১০৪শ্লোক৩৪১অধ্যায়৫৩৫২পৃ, শান্তি পর্ব, মহাভারত(গীতা প্রেস)


এখন আসুন দেখি অবতার সম্পর্কে বেদে কি বলা হয়েছে:



পূর্ণমদঃ পূর্ণমিদং পূর্ণাৎ পূর্ণমুদচ্যতে। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে।।

অনুবাদ: এখানে ঐ পূর্ণ অবতারী ও এই অবতার উভয়ই পূর্ণ অর্থাৎ সর্ব্বশক্তি সমন্বিত। পূর্ণ অবতার হইতে পুর্ণ অবতার লীলা বিস্তারার্থ প্রদুর্ভূত হন। লীলাপূর্তীর পরে পূর্ণ অবতারের পূর্ণ স্বরুপকে আপনাতে গ্রহণপূর্বক পূর্ণ অবতারী অবশেষে বর্তমান থাকেন, পরমেশ্বরের পূর্নত্ব কোনে ক্রমে হানিপ্রাপ্ত হয়না।
........ বৃহদারন্যক উপনিষধ ৫/১/১।



ছবিটি মাধ্বচার্য্যের বৃহদারন্যক উপনিষধের ৫/১/১ এর ভাষ্য


এখানে মহাবিষ্ণুর অবতার পূর্ণ: প্রকীর্তিতা: বলা হয়েছে।


আসুন দেখে নেই বেদে সরাসরি সূকর কোথায় রয়েছে:


ত্বং সূকরস্য দর্দৃহি তব দর্দূর্তু সূকর:

স্তোতৃনিন্দ্রস্য রায়সি কিমস্মাসান্দুচ্ছুনায়সে নি ষু স্বপ।।


ছবিটি স্বামী দিব্যানন্দ এর ঋগ্বেদ ভাষ্য থেকে দেওয়া। এখানে সূকর অর্থে নারায়নকে বুঝিয়েছেন।



ছবিটি তথাকথিত  আর্য্য সমাজি  হরিশরন সিদ্ধান্ত লংকারের ঋগ্বেদ ভাষ্য থেকে নেওয়া এখানে সূকর অর্থে উত্তম কাজ যিনি করেন, উত্তম রীতি দ্বারা বশ করেন, উত্তম যুদ্ধকর্তা।


এই মন্ত্রের দেবতা ইন্দ্র। এটা থেকে স্পস্ট হওয়া যায় যে সূকর রুপের নিকট প্রার্থনা করা হয়েছে।

................... ঋগ্বেদ ৭/৫৫/৪



আসুন দেখে নেওয়া যাক সেই বিরাট পুরুষের পশু রুপের কথা:


সপ্তাস্যাসন্ পরিধয়স্ত্রি: সপ্ত সমিধ: কৃতা:। দেবা যদ্যজ্ঞং তম্বানা অবধ্ন পুরুষং পশুম্



             ছবিটি শ্রী রাম শর্মা আচার্য্যের শুক্ল যজুর্বেদ ভাষ্য থেকে



অনুবাদ: দেবগন যে যজ্ঞের বিস্তার করেছেন, ঐটাতে বিরাট পুরুষকেই পশুরুপে ভাবনাতে বেধেছিলেন (নিযুক্ত করেছিলেন), ঐটাতে যজ্ঞের সহিত পরিধি ( সাত সুমুদ্র) এবং একুশ(ছন্দ) সমিধ হয়েছিলো।

……… শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/১৫


এখানে থেকে বোঝায় যায় ঈশ্বর পশুর রুপ ধারন করেন।


আসুন এখন দেখে নেই কোথায় কোথায় বরাহ অবতারের কথা রয়েছে:


আপাে বা ইদমগ্রে সলিলমাসীত্তম্মিন্ প্রজাপতির্বায়ূ্র্ভূত্বাঽচরৎ স ইমামপশ্যত্তাং বরাহাে ভূত্বাঽহরত্তাং বিশ্বকর্মা ভূত্বা ব্যামার্ট্ সাঽপ্রথত সা পৃথিবীভবত্তং পৃথিব্যে পৃথিবিত্বং তস্যামশ্রাম্যৎ প্রজাপতিঃ স দেবানসৃজত বসূন্ রুদ্রানাদিত্যান্তে দেবাঃ প্রজাপতিমব্রুবন্ প্র জায়ামহা ইতি সােঽব্রবীৎ যথাঽহং যুষ্মাংস্তপসাঽসৃক্ষ্যেবং তপসি প্রজননমিচ্ছধ্বামিতি।


অনুবাদ: দৃশ্যমান এই গিরি-নদী-সমুদ্রযুক্ত পৃথিবী উৎপত্তির পূর্বে কেবল সলিল (জল) ছিল। সেই সলিলে কোন প্রাণীর অস্তিত্বমাত্র ছিল না। তখন প্রজাপতি মূর্ত (ভূতাত্মক) শরীরের অবস্থানযােগ্য স্থানের অভাবে বায়ুরূপ ধারণ পূর্বক সেই সলিলের সর্বত্র বিচরণ করতে থাকেন। এবং এইভাবে বিচরণ করতে করতে সেই সলিলে নিমগ্ন ভূমি দর্শন করে স্বয়ং বরাহরূপী হয়ে দন্তের অগ্রভাগের দ্বারা সেই ভূমিকে ধারণ করে সলিলের উপরে আহরণ করে আনেন। এবং আহরণের পর বরাহরূপ পরিত্যাগ করে বিশ্বকর্মা রূপধারী হয়ে সেই ভূমিকে বিশেষভাবে পরিষ্কার পূর্বক তার দ্রবদ্রব্য অপনীত করে তাকে বিস্তৃত করেন। তখন সর্বপ্রাণীর আধারভূতা এই পৃথিবী দৃশ্যমান হয়। সেই হতে এই পৃথিবী নামটি সম্পন্ন হয়।(অতঃপর ক্রমে দেবসৃষ্টি ও গােসৃষ্টি দেখানাে হচ্ছে) তখন সেই ভূমিতে আপন মুর্তিতে অবস্থিত হয়ে সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হয়ে তপস্যা করতে থাকেন। সেই তপস্যার সামর্থ্যে তিনি প্রথমে বসুগণ, রুদ্রগণ ও আদিত্যগণকে সৃষ্টি করেন।

........................০৭.০১.০৫ কৃষ্ণ যজুর্বেদ





অথ বরাহবিহতম্। ইয়ত্যগ্র আসীদিতীয়তী হ বা ইয়মগ্রে পৃথিব্যাস প্রাদেশমাত্রী তামেমূষ ইতি বরাহ উজ্জঘান.....................................................................................................





এখানেও পৃথিবীকে বরাহরুপি পরমাত্মা রক্ষা করেন।

............................. শতপথ ব্রাহ্মণ, ১৪.১.২.১১


যস্মিন্ন্ ইদম্ অধি তিষ্ঠতি ইতি । স বরাহো রূপং কৃত্বা উপ ন্যমজ্জৎ । স পৃথিবীম্ অধ আর্ছৎ । তস্যা উপহত্য উদমজ্জৎ । তৎ পুষ্করপর্ণে ঽপ্রথয়ৎ…




এখানেও বরাহ রূপ ধারণ করিয়া পৃথিবী প্রাপ্ত হইলেন ও তাহা নিয়ে উত্থিত করলেন।

.................. তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ, ১.১.৩.৬

এখন দেখা যাক শতবাহু যুক্ত বরাহরুপি পরমাত্মার কথা সরাসরি:


                                       অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণুক্রান্তে বসুন্ধরে

                                       শিরসা ধারিতা দেবি রক্ষস্ব মাং পদে পদে।।

                                          উদ্ধৃতাসি বরাহেণ কৃষ্ণেন শতবাহুনা

                                            ভূমির্ধেনুর্ধরিত্রী  ধরণী লোকধারিণী



ছবিটি কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈতেরীয় আরন্যক  রাজেন্দ্রলাল মিশ্র এর থেকে নেওয়া


ছবিটি  মহানারায়ন উপনিষধের 
রামকৃষ্ণ মিশনের ভাষ্য থেকে নেওয়া।


অনুবাদহে দেবিবসুন্ধরা অশ্বসমুহ তোমাকে পদক্ষেপ করেছেরথগুলি ধাবিত হয়েছেবিষ্ণু (বামনরুপেপদক্ষেপ করেছেন (স্নানকালেতুমি মস্তকে ধৃত হয়ে পদে পদে আমাকে রক্ষা করো তুমি বরাহরুপী শতবাহু কৃষ্ণের দ্বারা উদ্ধৃত হয়েছ তুমি লোকধারণকারী পৃথিবীধেনুতুমি ধরিত্রীআশ্রয়দাত্রী


……… কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈতেরীয় আরন্যক ১০// অথবা মহানারায়ন উপনিষধ /(-)



দিবো বরাহমরুষং কপর্দিনং ত্বেষং রুপং নমস্য নি হ্বয়ামহে।

হস্তে বিভ্রদ্ভেষজা বাষাণি শর্ম বর্ম ছর্দিরস্মভ্যং যৎসৎ।।৫



                          ছবিটি রামগোবিন্দ ত্রিবেদীর ভাষ্য থেকে নেওয়া

অনুবাদ: ঐ স্বর্গীয় উৎকৃষ্ট বরাহের মতো দৃঢ়, অরুণবর্ণ, কপদৌ, দীপ্তিমান্ আর উজ্জ্বল ধর রুদ্র কে নমস্কার দ্বারা বলা হয়। হাত দিয়ে বরণীয় ভেষজ ধারন করে ওনার সুখ, বর্ম আর ঘর প্রদান করো।

.............. ঋগ্বেদ ১/১১৪/৫


উপরের  রেফারেন্সগুলি থেকে স্পস্টভাবে জানা যায় বেদে পশুর রুপে বরাহরুপি পরমাত্মার কথা রয়েছে।


তথ্য সংযুক্ত চলবে,
















No comments:

Post a Comment