মৎস জীবি ব্যাধে তৃনভোজী হলেও মৎস ধরে বাঘের নিকট বিক্রি করতো:
আমিষ খাবেন নাকি নিরামিষ খাবেন এটা নিয়ে তর্ক চলতেই আছে। যারা নিরামিষ খায় তারা আমিষ ভোজীদেরকে পাখন্ডী-রাক্ষস বলে দুষ্টমী করেন আর আমিষ ভোজীরা নিরামিষ ভোজীদেরকে নপুংসক বলে দুষ্টমী করেন। কিন্তু সনাতন ধর্মের শাস্ত্র দুই পক্ষ কেই সমর্থন করে। তাই বলে শাস্ত্র পরস্পর বিরোধী নয়। শাস্ত্রে সন্ন্যাস-ব্রহ্মচারী-সাত্ত্বিক উপাসনাকারি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিরামিষের প্রচলন আছে। আবার যারা সাধনা করেন তাদের ক্ষেত্রে আমিষের প্রচলন দেখা যায়। পেশাগত কর্ম অনুযায়ী ও মানুষের অভ্যাসের উপর নির্ভর করে আজকাল। অনেকে মনে করেন মাছ-মাংষ সাত্ত্বিক খাবার নয়, তাদেরকে বলছি যাহা ঈশ্বরকে অর্পন করা হয় তাহা সাত্ত্বিক খাবারই হয়ে যায়। এটা নিয়ে বেশিরভাগ উগ্রবাদী আমিষ ভোজী ও নিরামিষ ভোজীরা মেনে নিতে না পেরে সর্বসময় চিল্লাচিল্লি করেন। এটা ঠিক যে আমরা যেমন আহার করবো চেতনাও তেমনই হবে। তাই আমরা যতো বড় পশু আহার করবো চেতনা ততটাই হিংস্র হবে। তবে হিংস্রতার প্রয়োজন নেই বললে ভূল হবে। রক্ত দেখে যার প্রাণ কাদে সে হত্যা করে নিজেকে রক্ষা করবে কি করে? ক্ষত্রিয় সুলভ আচরনের জন্য আমিষের প্রয়োজন রয়েছে। নিরামিষ ভোজনের রেফারেন্সের অভাব নাই সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রে তাই এটা নতুন করে দেখানোর প্রয়োজন নাই। আসুন আমরা দেখে নেই আমিষ ভোজীদের সমর্থনে কিছু শাস্ত্রীয় রেফারেন্স।
পুরানে মাংস খাওয়া মানে যে গরু খাওয়া নয় এটা সম্পর্কে করপাত্রী মহারাজ স্পস্ট করে বিকৃত অনুবাদ
গুলিকে তিরস্কার করেছেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোথায় কি বলেছেন উনি:
পুরাণসমূহে কোথাও গোমাংষ ভক্ষণ বা তা দিয়ে সৎকারের কথা বলা হয়নি। যে গো-বংশ কে রক্ষা করার জন্য সম্রাট দিলীপ সিংহের সামনে আমিষ পিন্ড সমতুল্য নিজের শরীরকে অর্পন করে দিয়েছিলেন, সেই গোবংশের হত্যা তথা তার মাংষ ভক্ষণের চর্চা কারও অত্যন্ত নিন্দনীয়।
................................... স্বামী শ্রী করপাত্রী মহারাজ- বেদার্থ পারিজাত ভাগ ২, পৃষ্ঠা ২০৮১
ছবিটি কুলার্ণবতন্ত্রের
ছবিটি চৈতন্যভাগবতের
আসুন দেখে নেওয়া যাক পুরান(ভাগবত) কি বলে:
যদ্ ঘাণভক্ষো
বিহিত: সুরায়া-
স্তথা পশোরালভনং
ন হিংসা।
অনুবাদ: শ্রৌত্রামণি যজ্ঞেও সুরা আগ্রাণের বিধান আছে পানের নয়। যজ্ঞে পশু উৎসর্গ পালনীয় হিংসা নয়।
.................... ১১/৫/১৩ ভাগবত
এখানে স্পস্টকরে বলা হচ্ছে যজ্ঞে পশু বলি হিংসা নয়। পুরান শিরোমনি ভাগবত যজ্ঞে পশুবলিকে সমর্থন করছে।
মাংস খাওয়া নিয়ে ভাগবত কি বলে দেখা যাক:
ছবিটি শ্রী বলদেব বিদ্যাভূষনের ব্রহ্মসুত্রের গোবিন্দ ভাষ্য
................ ১০/৬৯/৩৫ ভাগবত পুরান
ব্রজগোপী কতৃক মাংস দ্বারা শৈলবলী।
............ ৫৭নং শ্লোক, ১৮৭ অধ্যায়, ব্রহ্মপুরান।
আসুন দেখা যাক স্মৃতি শাস্ত্র কি বলে:
না কৃত্বা প্রানিনাং হিংসাং মাংস মুৎপদাতে কচৎ।
ন চ প্রানিবধঃ স্বর্গ্য স্তষ্প্রাদ যাগে বধো ইবধঃ।।
অর্থাৎঃ- প্রানি হিংসা না করিলে মাংস উৎপন্ন হয় না,আবার প্রানি বধ স্বর্গজনক নহে, এই জন্যই যজ্ঞের নিমিত্তে যে বধ হয় তাহা অহিংসা।।
................ ৪র্থ অধ্যায় বশিষ্ঠ্য সংহিতা
যা বেদ বিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।
অহিংসামেব তান্বিদ্যাদ্বেদাদ্ধর্ম্মোহি নির্ব্বভৌ।।
অনুবাদ: বেদ হতেই ধর্মের উৎপত্তি বা প্রকাশ অতএব বেদানুসারে এই চরাচর জগতে যে হিংসার (জীববধের) বিধান আছে তাহা অহিংসা বলিয়া জানিবে। অর্থাৎ বধ জনিত পাপ হয় না।।
........... ৫/৪৪, মনুস্মৃতি
ছবিটি বিষ্ণু সংহিতার
আসুন দেখি মহাভারত কি বলে:
মৎস ভোজন
ন গস্তব্যমিত: পুত্র! তবাহারমহং সদা।
দাস্যামি মৎস্যপ্রবরানদ্যতামিতি ভারত!।।৩৯।।
ইত্যুক্তস্তর্পয়ামাস স পিতৃন্ দেবতাস্তথা।
আহারমকরোন্নিত্যং প্রাণান্ বেদাংশ্চ ধারয়ন্।।৪০।।
অনুবাদ:
পুত্র! এস্থান হইতে তোমার যাইতে হইবেনা; আমি তোমাকে
তোমার খাদ্যরুপে উত্তম উত্তম মৎস প্রদান করিব; তুমি তাহাই ভোজন করিতে থাক। ভারতনন্দন!
স্বরস্বতী সারস্বতমনিকে এই কথা বলিয়াছিলো।৩৯।।
স্বরস্বতী এইরুপ বলিলে, স্বরস্বতমুনি দেবগণ ও পিতৃগণের
তর্পন করিতে লাগিলেন এবং প্রাণ ও বেদ ধারন করিবার উদ্দেশ্যে প্রত্যহ সরস্বতী প্রদত্ত
মৎস ভোজন করিতে থাকিলেন।।৪০।।
………… ৩৯, ৪০ নং শ্লোক, ৪৭অধ্যায়, শৈল্য পর্ব, মহাভারত।
আসুন দেখি বাল্মিকি রামায়ন কি বলে:
স তত্রাগ্নিং সমাস্তীর্য শরপত্রৈ: সতোমরৈ:।
ছাগস্য কৃষ্ণবর্ণস্য গলং জগ্রাহ জীবত:।।
অনুবাদ: শরপত্র এবং তোমরসহ অগ্নিস্থাপন করে একটি কৃষ্ণবর্ণবিশিষ্ঠ জীবন্ত ছাগলের গলায় লক্ষ স্থির করল।
সকৃদেব সমিদ্ধস্য বিধূমস্য মহার্চিষ:
অনুবাদ: এক আঘাতেই আহুতি প্রদান করা সেই অগ্নি ধূমশুন্য হয়ে গেলো।
.............. ২৪,২৫ নং শ্লোক, যুদ্ধ কান্ড, বাল্মিকি রামায়ন।
আসুন দেখি গীতা কি বলে:
ছবিটি অগড়ানন্দের গীতা ভাষ্য ৬/১১ থেকে
ছবিটি শ্রী চৈতন্য-সারস্বত মঠ নবদ্বীপ থেকে প্রচারিত গীতা ভাষ্য ৬/১১ থেকে
হরিণ স্বীকার করে কি বাঘকে খেতে দেওয়ার পরে খাওয়া শেষ হলে চামড়াটা নিয়ে আসবেন? এটা সম্ভব নয়। তাই এই যুক্তি খাটেনা। পশু হত্যার বিধানই প্রমান করে খাওয়ার বিধান।
এখন দেখা যাক বেদের সংহিতা কি বলে:
…………………………………………………মৃগয়ুভ্যশ্চ বো নম:
অনুবাদ: ব্যাধরুপী রুদ্রদেবকে নমস্কার।
…………… শুক্লযজুর্বেদ ১৬/২৭
উগ্র লোহিতেন মিত্রং………… ভবস্য কণ্ঠ্যং রুদ্রস্যান্ত: পার্শ্ব্যং মহাদেবস্য
যকৃচ্ছর্বস্য………………।
অনুবাদ: উগ্র রক্তকনিকা দ্বারা মিত্র দেবের…… কণ্ঠের দ্বারা
ভবদেবের, পার্শ্বের মাংস দ্বারা রুদ্র দেবের, যকৃতের দ্বারা মহাদেবের প্রীতি সাধন করছি।
…………… শুক্ল যজুর্বেদ ৩৯/৯
রক্তকনিকার প্রকারভেদে শ্বেতরক্তকনিকা ও লোহিত রক্তকনিকা আছে। এখানে লোহিত রক্ত কনিকা অর্থে লাল রক্ত প্রদানের কথা বলা হয়েছে। কন্ঠ যেটাকে ট্রাকিয়া/শ্বাস নালী বলে এই ট্রাকিয়া অর্পনের কথা বলা হয়েছে। পার্শ্বের মাংস মানে থাই-লেগ-আরম এর মাংস অর্পন করতে বলা হয়েছে। যকৃত মানে লিভার বলে এই লিভার প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
এই মন্ত্রে একটি পশুর শরীরের বেশিরভাগ অঙ্গের অর্পনের কথা বলা হয়েছে। এটা দ্বারা প্রমান হয় পশু বলির পরে সেটাকে পিস পিস করে যে স্বরুপকে যে অঙ্গ অর্পন করতে হয় তাকে সেই অঙ্গ অর্পন করে অর্চনা করতে হয়।
শুক্ল যজুর্বেদের ২৮/৪৬ এর শ্রী রাম শর্মা আচার্য্যর ভাষ্য
এত বদন্ত্যবিন্ননা মধু ন্যুংখয়ন্তে অধি পক্ক আমিষি।
বৃক্ষস্য শাখামরুণস্য বপ্সতস্তে সূভর্বা: বৃষভা: প্রেমরাবিষু:।।৩।।
অনুবাদ: নয়া বা লাল রঙ্গিন শাখা খাওয়া শোভন ভোজনকারি বৃষের সমান প্রস্তর শব্দ করে। ঐ রকম মাংস ভক্ষনকারী মাংস রান্নার সময় আনন্দ ধ্বনি করে, ওরাও শব্দ করে।
............. ঋগ্বেদ ১০/৯৪/০৩
প্র সম্রাজে বৃহদর্চা গভীরং ব্রহ্ম প্রিয়ং বরুণায় শ্রুতায়।
বি যো জঘান শমিতেব চর্মোর্পস্তিরে পৃথিবীং সূর্যায়।।১।।
অনুবাদ: হে অগ্নি, তুমি ভালভাবে জানো, সর্বত্র প্রসিদ্ধ আর উপদ্রপ কি নিবারক বরুন দেবের জন্য প্রভুত, অনেকবার প্রিয় স্তোত্র উচ্চারণ করো। পশুহন্তাকারি যে প্রকারে নিহত পশুর চামড়াকে বিস্তৃত করে, ঐ প্রকারে আস্তরনার্থ অন্তরিক্ষকে বিস্তারিত করে।
............... ঋগ্বেদ ৫/৮৫/১
দেখা যাক ব্রহ্ম সুত্র কি বলে:
মাধ্বগৌড়িয় আচার্য্য শ্রী বলদেব বিদ্যাভূষন কতৃক গোবিন্দভাষ্য:
সূত্রম: অশুদ্ধমিতি চেন্ন শব্দাৎ
সূত্রার্থ- ‘অশুদ্ধম’- ভোগজনক পাপ কর্ম্ম আছে, ;ইতি চেৎ’- এই যদি বল, ‘ন’ তাহা নহে, যেহেতু ‘শব্দাৎ’ অর্থাৎ প্রমাণ আছে, অগ্নিযোমীয় পশু- হিংসা বিধান আছে, উহা পাপজনক নহে।।
............. ব্রহ্মসুত্র ৩/১/২৬
No comments:
Post a Comment