রাধা নক্ষত্র দেবী:
অনেকেই প্রশ্ন করেছেন বেদে রাধা নেই, নিরুক্ত অনুসারে বেদে রাধা অর্থে শুধুমাত্র ধন কে বুঝিয়েছে। যখন বেদের অন্য মন্ত্র গুলি নিয়ে বিচার করা হয় তখন দেখা যায় বেদে রাধা অন্য অর্থেও বোঝায়।
আসুন আমরা দেখে নেই অথর্ববেদ সংহিতার ১৯/০৭/৩ নং মন্ত্র
রাধে বিশাখে শুহবানুরাধা জ্যেষ্ঠা সুনক্ষত্রমরিষ্ট মুলম্।।
ছবিটি তুলশী রাম শর্মার ভাষ্যের
এই ছবিতে দেখা যায় দয়ানন্দ সমাজী তুলশী রাম শর্মা অনুবাদের সময় রাধা ও অনুরাধা শব্দ দুটিকে বাদ দিয়ে অনুবাদ করেছেন।
ছবিটি হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কারের ভাষ্যের
দয়ানন্দ সমাজী হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার তার ভাষ্যে রাধা ও অনুরাধা শব্দ দুটিই রেখেছেন। তিনি এক্ষেত্রে রাধা ও বিশাখা নক্ষত্র বলেছেন। এই ভাষ্য অনুষারে রাধা অর্থে নিশ্চয় ধন বোঝানো হয়নি।
আসুন নক্ষত্র সম্পর্কে জেনে নেই। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে নক্ষত্র হল চন্দ্রপথের ২৮টি ভাগ যেগুলো "চন্দ্রনিবাস" হিসেবে পরিচিত । সূর্যের গতিপথকে যেমন ১২ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে রাশি তেমনি চন্দ্রপথকে ২৮ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে নক্ষত্র । ২৮টি নক্ষত্রের নাম যথাক্রমে – (১) অশ্বিনী (২) ভরণী (৩) কৃত্তিকা (৪) রোহিণী (৫) মৃগশিরা (৬) আর্দ্রা (৭) পুনর্বসু (৮) পুষ্যা (৯) রেবতী (১০) অশ্লেষা (১১) মঘা (১২) পূর্বফাল্গুনী (১৩) উত্তরফাল্গুনী (১৪) হস্তা (১৫) চিত্রা (১৬) স্বাতী (১৭) বিশাখা (১৮) অনুরাধা (১৯) জ্যেষ্ঠা (২০) মূলা (২১) পূর্বাষাঢ়া (২২) উত্তরাষাঢ়া (২৩) শ্রবণা (২৪) ধনিষ্ঠা (২৫) শতভিষা (২৬) পূর্ব্বভাদ্রপদ (২৭) উত্তরভাদ্রপদ (২৮) অভিজিৎ।
অথর্ববেদের ঐ মন্ত্র সম্পর্কে দয়ানন্দ সমাজী ব্যাতিরেখে অন্য ভাষ্যকরেরা কি বলেছেন দেখা যাক
ছবিটি শ্রী রাম শর্মা আচার্য্যের ভাষ্যের
অনুবাদঃ রাধা বিশাখা নক্ষত্র আবাহন যোগ্য তথা অনুরাধা, জেষ্ঠা এবং মুল নক্ষত্র মঙ্গলপ্রদ।
এই অনুবাদ অনুসারে রাধা দ্বারা বিশাখা, অনুরাধা জেষ্ঠা মঙ্গলপ্রদ মুল নক্ষত্র গুলিকে বুঝিয়েছে।
আসুন দেখে নেই পরমেশ্বর বিষ্ণুর সহিত নক্ষত্রের কি সম্পর্ক?
আদিত্যানামহং বিষ্ণুর্জ্যোতিষাং রবির শুমান্।
মরীচির্ম্মরুতামস্মি নক্ষত্রাণামহং শশী।।
অনুবাদ:দ্বাদশ আদিত্যের মধ্যে আমি বিষ্ণু নামক আদিত্য জ্যোতিস্কগণের মধ্যে আমি কিরণমালী সূর্য্য। মরুৎগণের মধ্যে আমি মরীচি এবং নক্ষত্রগণের মধ্যে চন্দ্র।
.................... শ্লোক ২১, অধ্যায় ১০গীতা।
আসুন দেখি পুরানে নক্ষত্রের সহিত পরমেশ্বর বিষ্ণুর কি সম্পর্ক?
নক্ষত্রপুরুষঞ্চাদৌ চৈত্রমাসে হরিং যজেৎ
অনুবাদ: চৈত্রমাসে নক্ষত্র পুরুষ হরির পূজা করিবে।
নক্ষত্রপুরুষো বিষ্ণু: পূজনীয় শিবাত্মক:
অনুবাদ: নক্ষত্রপুরুষ শিবাত্মক বিষ্ণুর পূজা করা কর্তব্য।
......................... ১ ও ৮নং শ্লোক, ১৯৬অধ্যায়, অগ্নিপুরান।
অনুরাধা হৃদয়ে, দুই বাহুতে বিশাখা, জেষ্ঠা গ্রীবাতে স্থিত। অনুরাধা নক্ষত্র দ্বারা ভগবানের উদর, বিশাখা নক্ষত্র দ্বারা ভগবানের দুই বাহু, জেষ্ঠা দ্বারা ভগবানের গ্রীবার পূজো করা হয়।
..................... পৃষ্ঠা ৩৯৬, অধ্যায় ৮০, বামনপুরান(গীতাপ্রেস)
এখান থেকে জানলাম বিষ্ণু নক্ষত্র পুরুষ।
দেখা যাক অমরকোষ ও শব্দ কল্পদ্রুম কি বলে?
অনুবাদ: রাধা, বিশাখা যো দো (স্ত্রীয় ) নাম বিশাখাকে হো।
........... প্রথম কাণ্ড অমরকোষ।
অমরকোষে রাধা দ্বারা ’স্ত্রী’ ও বোঝাচ্ছে।
শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে রাধা বলিতে গোপী বিশেষ:, বিশাখানক্ষত্রম্, বিষ্ণুক্রান্তা ইত্যাদি বুঝিয়েছে।
এখান থেকে জানা যায় রাধা বলিতে গোপী নক্ষত্র বিষ্ণুক্রান্তাও বোঝায়।
রাধাই যেহেতু বিশাখা সেহেতু বিশাখা সম্পর্কে তৈতেরীয় ব্রাহ্মণ কি বলে চেক করি
নক্ষত্রাণাধিপত্নী বিশাখে শ্রেষ্ঠা বিন্দ্রাগ্নী ভূবনস্য গোপৌ
অনুবাদ: বিশাখা নক্ষত্রগণের অধিপত্নী ও ভূবনের শ্রেষ্ঠা গোপী।
নক্ষত্র সম্পর্কে আরো কিছু মন্ত্র দেখা যাক:
শ্রীশ্চ তে লহ্মীশ্চ পত্ন্যাবহোরাত্রে পার্শ্বে নক্ষত্রাণি রুপমশ্বিনৌ ব্যাত্তম্। ইঞ্চন্নিষাণামুং ম ইষাণ সর্বলোকং ম ইষাণ।।
ছবিটি নব্য আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতীর ভাষ্য
………… শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/২২।
এখানে জগদীশ্বরকে নক্ষত্ররুপী বলা হচ্ছে অর্থাৎ নক্ষত্র পরমেশ্বর বিষ্ণুর আত্ম রুপ।
পুরান, স্মৃতিশাস্ত্র বিচার করলে দেখা যায় রাধাই কৃষ্ণের আত্ম স্বরুপ। আসুন রেফারেন্সগুলি দেখি