গীতার রাধা:
১৮টি যোগ ও মাহত্ম্যের সমস্টির গীতায় চতুর্বিদ ভক্তির ব্যাক্ষায় গীতা শাস্ত্রী জগদীশ চন্দ্র ঘোষ ব্রজ গোপীদের ভক্তিকে নিস্কাম ভক্তি বলিয়াছেন।
চতুর্ব্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সুকৃতিনোহর্জ্জুন।
আর্ত্তো জিজ্ঞাসুরর্থার্থী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।।৭/১৬
অনুবাদ: হে ভরতর্ষভ, হে অর্জ্জুন, যে সকল সুকৃতিশালী ব্যক্তি আমাকে ভজনা করেন, তাহারা চতুর্ব্বিধ – আর্ত্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থাথী এবং জ্ঞানী। চতুর্ব্বিধ ভক্ত – পূর্ব্ব শ্লোকে যাহারা ভগবদ্বহির্ম্মূখ, পাষণ্ডী, তাহাদিগের কথা বলা হইয়াছে। এই শ্লোকে যে সুকৃতিশালী ব্যক্তিগণ ভগবানে ভক্তিমান্ তাঁহাদিগের কথা বলা হইল। ইহারা চতুর্ব্বিধ – (১) আর্ত্ত – রোগাদিতে ক্লিষ্ট অথবা অন্যরূপে বিপন্ন; যেমন – কুরুসভায় দ্রৌপদী। (২) জিজ্ঞাসু – অর্থাৎ আত্মজ্ঞান লাভেচ্ছু; যেমন মুকুন্দ, রাজর্ষি জনক ইত্যাদি। (৩) অর্থার্থী – ইহকালে বা পরলোকে ভোগ-সুখ লাভার্থ যাঁহারা ভজনা করেন; যেমন – সুগ্রীব, বিভীষণ, উপমন্যু, ধ্রুব ইত্যাদি। (৪) জ্ঞানী – তত্ত্বদর্শী, শ্রীভগবান্কে তত্ত্বতঃ যাঁহারা জানিয়াছেন- যেমন, প্রহ্লাদ, শুক, সনক ইত্যাদি। ইহাদিগের মধ্যে প্রথম তিন প্রকার ভক্ত সকাম। ব্রজগোপিকাদি নিস্কাম প্রেমিক ভক্ত।
সবথেকে আলোচিত সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যয়ের গীতা ভাষ্যর গীতা মাহাত্ম্যতে রাধা রয়েছে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যয়ের রাধাকে অস্বীকার করা হয়েছে এমন অভিযোগকারিদের প্রমান্য হিসাবে ব্যবহার করা কৃষ্ণচরিত্র বইটি নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। কৃষ্ণ চরিত্র বইটি আসলে কিশোর-কিশোরিদের জন্য সর্বস্তরের জন্য নহে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টপাধ্যয় একসময় গীতার শ্লোকও বদলিয়ে দিয়েছিলেন
মুলশ্লোকে ধর্ম্ম-সংরক্ষণার্থায় নয় সংস্থাপনায় রয়েছে। সংস্থাপনায় নিয়ে কয়েকজনের মতামত দেওয়া হলো।
শাঙ্করভাষ্য। - ধর্ম্মসংস্থাপনায় সম্যক্ স্থাপনং তদর্থং
সম্ভবামি যুগে যুগে প্রতিযুগম্ ।।
স্বামীকৃত টিকা।– এবং ধর্ম্মসংস্থাপনাথায় সাধুরক্ষণেন
দুষ্টবধেন চ ধর্ম্মং স্থিরীকর্ত্তং যুগে যুগে তত্তদবসরে সম্ভবামীত্যর্থ:।
মধুসূসনসরস্বতীকৃত টীকা।– ধর্ম্মসংস্থাপনার্থায় ধর্ম্মস্য
সম্যধর্ম্মনিবারণেন স্থাপনং বেদমার্গপরিরক্ষণং ধর্ম্ম স্থাপনাম্।
বঙ্কিমচন্দ্রচট্টপাধ্যয় যখন কৃষ্ণচরিত্র বইটি লেখেন তখন উনি নাস্তিক ছিলেন।
বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যয় কতৃক কৃষ্ণের চরিত্র হিসাবে ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণকেউ স্বীকার
বঙ্কিম চন্দ্র চট্টপাধ্যয় তার কৃষ্ণচরিত্র বইয়ে রাধাকে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে তারই ধর্ম্মতত্ব বইয়ের একাদশ অধ্যায়ে বৈদিক ধর্মকে নিকৃষ্ঠ আর আধুনিক বৈষ্ণব ধর্মকে শ্রেষ্ঠ বলেছেন।
লিংক যুক্ত করা হলো যেনো কেনফিউজ না হন।
https://bn.wikisource.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BE:%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0_%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC.djvu/%E0%A7%AD%E0%A7%AF?fbclid=IwAR3cuOy37s8snL02LgJRFuH8nBIFTaANg8J6lFeh63CAivkB_m1qjIS51mI
এখান থেকে বোঝা যায় বঙ্কিমচন্দ্রচট্টপাধ্যয় তার নাস্তিকতার আঙ্গিকে রাধাকে অস্বীকার করেছিলেন কিন্তু আস্তিকতায় আধুনিক বৈষ্ণব ধর্মকে শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ রাধাকে স্বীকার করেছিলেন।
মম যোনির্মহদ্ ব্রহ্ম তস্মিন্ গর্ভং দধাম্যহম্।
সম্ভবঃ সর্ব্বতভূতানাং ততো ভবতি ভারত।।৩
অনুবাদ: হে ভারত, প্রকৃতিই আমার গর্ভাধান-স্থান। আমি তাহাতে গর্ভাধান করি, তাহা হইতেই সর্ব্বভূতের উৎপত্তি হয়।
সর্ব্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্ত্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ।
তাসাং ব্রহ্ম মহদ্ যোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা।।৪
অনুবাদ: হে কৌন্তেয়, দেবমনুষ্যাদি বিভিন্ন যোনিতে যে সকল শরীর উৎপন্ন হয়, প্রকৃতি তাহাদের মাতৃস্থানীয়া এবং আমিই গর্ভাধানকর্ত্তা পিতা।
এই শ্লোক দুটি থেকে বোঝা যায় যে এই গর্ভদানকারি পিতা কৃষ্ণ আর গর্ভ(প্রকৃতি) রাধা।
No comments:
Post a Comment