Thursday, July 9, 2020

বেদে রাধা অর্থে দেবী, ধন প্রভৃতি রুপ বিদ্যমান রয়েছে।

বেদে রাধা



    


আসুন দেখি সামবেদ সংহিতায় কি বলে দেখি

ইদং হ্যম্বোজসা সুতং রাধানাং পতে। পিবা ত্বতস্য গির্বণ:।। ১৬৫
অনুবাদ: হে রাধাপতি ( = সর্বসিদ্ধিকর ধনের অধিপতি), হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, বলসহায়ে প্রস্তুত এই সোমরস তোমার পানের জন্য।।
উত্বা মন্দন্তু সোমা: কৃণুষ্ব রাধো অদ্রিব: ।। অব ব্রক্ষ্মদ্বিষো জহি।।১৯৪
অনুবাদ: হে বজ্রধারী ইন্দ্র, সোমসকল তোমাকে উত্তম রুপে হর্ষাান্বিত করুক; অমাদের ধন প্রদান কর; আর বৃক্ষ্মদ্বেষীকে বিনাস কর।।
শ্রুতং বো বৃত্রহন্তমং প্র শর্ধং চর্ষণীনাম। আশিষে রাধসে মহে।।২০৮
অনুবাদ: শ্রুতকীর্তি, বৃত্তহন্তা, জনগণের যজ্ঞকর্মে উৎসাহিত ইন্দ্রের কাছে তোমাদের জন্য সর্বসিদ্ধিকর মহাধন কামনা করি।
ব্রাক্ষ্মণাদিন্দ্র রাধস: পিবা সোমমৃতূঁরনু। তবেদং সখ্যমস্তৃতম্।।২২৯
অনুবাদ: হে ইন্দ্র, তুমি ঋতুদের সোম পানের পর বৃক্ষ্মজ্ঞ স্তুতিকারীর ধনভূত সোমপাত্র থেকে সোম পান কর; হে ইন্দ্র তোমার সখ্যতাই অবিচ্ছিন্ন।
এবাহ্যসি বীরয়ুরেবা শূর উত স্থির:। এবা তে রাধ্যং মন:২৩২
অনুবাদ: হে শুর, তুমি অবিচল, তুমি বীর্যকামী, তুমি এই রুপ; তোমার আরধ্যমনও এইরুপ।।
অভি প্র ব: সুরাধসমিন্দ্রমর্চ যথা বিদে। যো জরিতৃভ্যো মঘবা পরুবসু: সহস্রেণেব শিক্ষতি।।২৩৫
অনুবাদ: আমি যেমন করি তোমরাও তোমাদের মঙ্গলের জন্য শোভন সর্বসিদ্ধিকর ধনবিশিষ্ট ইন্দ্রের কাছেসেই ভাবনা প্রার্থনা কর, তিনি মহানদাতা বহুধনযুক্ত এবং স্তোতাকে সহস্র প্রকারে দান করে থাকেন।।
বস্যাং ইন্দ্রাসি মে পিতুরুত ভ্রাতুরভুঞ্জত:। মাতা চ মে ছদয়থ: সমা বসো বসুত্বনায় রাধসে।।২৯২
অনুবাদ: হে ইন্দ্র তুমি আমার পিতা ও ভ্রাতা অপেক্ষা অনেক উদার ও ধনসম্পন্ন। হে বসু, তুমি মায়ের এবং সংবৎসররুপে আমাকে সর্বসিদ্ধিকর ধনে আচ্ছাদিত কর।।
যজামহ ইন্দ্রং বজ্রদক্ষিণং হরীণাং রথ্যাংতবিব্রতানাম্। প্র শ্মশ্রম্নভির্দোধুবদূর্ধ্বয়া ভুবদ্ বি সেনাভির্ভয়মানো বি রাধসা।।৩৩৪
অনুবাদ: বিবিধ প্রকার কর্মের সহিত সম্বন্ধিত সকল প্রকার বস্তুর হরনকারী রশ্মিসমুহকে যিনি নিজ গমন পথের সহিত যুক্ত করেন, যাঁর রশ্মিসমূহ কম্পমান শ্মশ্রুর মতো এবং যিনি সর্বসিদ্ধিকর ধন দানের জন্য নিজ বলের দ্বারা বিপক্ষকে ভীতিগ্রস্ত করে উর্দ্বে অবস্থান করেন, সেই দক্ষিণহস্তে বজ্রধারনকারী ইন্দ্রকে ভজনা করি।
সত্রাহণং দাধৃষিং তুম্রমিন্দ্রং মহামপারং বৃষভং সুবজ্রম্। হন্তা যো বৃত্রং সনিতোত বাজং দাতা মঘাত্রি মঘবা সূরাধা: ।।৩৩৫
অনুবাদ: যে মানুষ নিজেকে বলবান ও ক্ষিপ্রগতিযুক্ত মনে করে, আমাদের হিংসা করবার জন্য আমাদের প্রতি ধাবিত হয়, তাকে হে বলবান ইন্দ্র, তোমার দ্বারা রক্ষিত হয়ে মনুষ্যবরে যুক্ত হয়ে যেন অভিভূত করতে পারি।
বিভোষ্ট ইন্দ্র রাধসো বিভ্বী রতি: শতকৃতো। অথা নো বিশ্বচর্ষনে দ্যুম্নং সুদত্র মংহয়।।৩৬৬
অনুবাদ: হে ইন্দ্র, হে শতযজ্ঞকর্মা, তোমার বিভূতি সর্বসিদ্ধিকরধন ও দানবহ। অতএব হে বিশ্বদ্রষ্ঠা, হে মঙ্গলদাতা, আমাদের প্রচুর ঐশ্বর্য প্রদান করো।
এন্দুমিন্দ্রায় সিঞ্চত পিবাতি সোম্যাং মধু। প্র রাধাংসি চোদায়তে মহিত্বনা।।৩৮৬
অনুবাদ: ইন্দ্রের উদ্দেশে সোম সিঞ্চন কর। তিনি সোমময় মধু পান করে থাকেন এবং সোমপানের দ্বারা মহান হেময় সর্বসিদ্ধিকর ধন সম্পদ প্রেরণ করেন।
প্র সুস্বানায়ান্ধসো মর্তো ন বষ্ট তদবচ: । অপ শ্বানমরাধসং হতা মখং ন ভৃগব:।।৫৫৩
অনুবাদ: মানুষের কামনামুলভ স্তুতি যেমন জলকে ঘিরে হয়, তেমনি সোমদেব মেঘ হতে জল নিস্কাসনের জন্য মেঘকে ঘিরে থাকেন। তিনি ক্রুর অদানকারী বায়ুকে বিনাশ করেন যেমন মাধ্যমিক ভুগু নামক রশ্মিগণ যজ্ঞকর্মকে শুস্ক করেন।
বারিবোধাতমো ভুবো মংহিষ্ট বৃত্রহন্তম:। পর্ষি রাধো মঘোনাম্।।৬৯১
অনুবাদ: (হে সোম) তুমি প্রভূত দানশীল, মহান, উত্তম মেঘহন্তা; মেঘে অবস্থিত সর্ব সিদ্ধিকর বারিধন আমাদের দান কর।
শংসেদুক্থং সুদানব উত দুক্ষ্যং যথা নর:। চক্রিমা সত্যরাধসে।।৭১৭।।
অনুবাদ: শোভনদানযুক্ত সর্বসিদ্ধিকর সত্যধনযুক্ত ইন্দ্রের উদ্দেশে মানুষেরা যেরুপ দীপ্ত স্ত্রোত পাঠ করে আমরাও সেরুপ করি।
ইহ ত্বা গোপর্রীণসং মহে মন্দন্তু রাধসে। সরো গৌর যথা পিব।। ৭৩৩।।
অনুবাদ:মহাধন লাভের জন্য মানুষেরা সোমপানে মত্ত হোক, আর হে ইন্দ্র, তুমি তৃষিত মৃগের মতো সোম পান কর।
ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধাতং পতে। পিবা ত্বাহতস্য গির্বণ: ।।৭৩৭।।
অনুবাদ: হে রাধাপতি ( = সর্বসিদ্ধিকর ধনের অধিপতি), হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র, বলসহায়ে প্রস্তুত এই সোমরস তোমার পানের জন্য।।
প্র তে অশ্নোতু কুক্ষ্যো: প্রেন্দ্র ব্রক্ষ্মণা মির: । প্র বাহূ শূর রাধসা।।৭৩৯।।
অনুবাদ: হে ইন্দ্র সোম তোমার কুক্ষিদ্বয়ে ব্যাপ্ত হোক, স্তোত্রের সহিত তোমার শরীরে প্রবেশ করুক । হে শূর সর্বসিদ্ধিকর ধন লাভের জন্য সোম তোমার বাহুদ্বয়ে ব্যাপ্ত হোক।
স যজোতে অরুষা বিশ্বমোজসা স দুদ্রবৎ স্বাহুত: । সুব্রক্ষ্মা যজ্ঞ: সুশমী বসূনাং দেবং রাধো জনানাম।।৭৫০।।
অনুবাদ: তিনি রশ্মিকে যুক্ত করেন, তেজ দ্বারা সকল কিছু অভিভূত করেন। তিনি দ্রুতগামী সুন্দররুপে আহুত, সুষ্ঠুরুপে স্তুত, সমস্ত যজ্ঞর্ক, সুকর্মা, দেব ও জনগণের আরধ্য।
প্রসুন্বানায়ান্ধাসো মর্তো ন বষ্ট তদ্বচ:। অপ শ্বানমরাধসং হতা মখং স ভৃগব:।।৭৭৪।।
অনুবাদ: মানুষের কামনাসূলভ স্তুতি যেমন জলকে ঘিরে হয়, তেমনি সোম দেব মেঘ থেকে জল নিস্কাশনের জন্য মেঘকে ঘিরে থাকেন। মাধ্যমিক ভৃগু নামক রশ্মিগণযেমন যজ্ঞকর্মকে শুস্ক করেন, তেমনি ক্রূর অদানকারী বায়ুকে বিনাশ করেন ।
বরুণ: প্রাবিতা ভুবন্মিত্রো বিশ্বভিরুতিভি: । করতাং ন: সুরাধস:।।৭৯৫।।
অনুবাদ: বরুণ ও মিত্র উত্তমরুপে রক্ষক হয়ে সকলপ্রকার রক্ষণকর্মের দ্বারা আমাদের উৎকৃষ্ঠ সর্বার্থসিদ্ধিকর ধনসম্পন্ন করুন।
অভি প্র ব: সুরাধসমিন্দ্রমর্চ যথা বিদে। যো জরিতৃভ্যো মঘাবা পুরুবসু: সহস্রেণের শিক্ষতি ।।৮১২।।
অনুবাদ: আমি যেমন মনে করি তোমরাও তোমাদের মঙ্গলের জন্য শোভন সর্ব সিদ্ধিকর ধনবিশিষ্ট ইন্দ্রের কাছে এইভাবে প্রার্থনা কর, যিনি মহানদাতা বহুধনযুক্ত এবং স্তোতাকে সহস্রপ্রকারে দান করে থাকেন।
এবা হ্যসি বীরয়ুরেরা শূর উত স্থির । এবা তে রাধ্যং মন:৮২৪
অনুবাদ:হে শূর, তুমি অবিচল, তূমি বীর্যকামী, তুমি এইরুপ; তোমার আরধ্য মনও এইরুপ।।
সমৎস্বগ্নিমবসে বাজয়ন্তো হবামহে বাজেষু চিত্ররাধসম্।।১১৬৮।।
অনুবাদ:আমরা অন্নকামি হয়ে জীবনসংগ্রামে অগ্নিকে আমাদের রক্ষার জন্য ডাকি; সকল অন্নের মধ্যে তিনিই বিচিত্রভাবে সর্বসিদ্ধিদাতা।।
যন্মন্যসে বরেণ্যমিদ্র দ্যুক্ষং তদা ভর। বিদ্যম তস্য তে নয়মকূপারস্য দাবন্য।।১১৭২।।
অনুবাদ:হে ইন্দ্র, যে কাম্য পূজনীয় ধন আছে (অথবা যে কাম্যধন আমার গৃহে নেই) সেই ধন আমাদের দেওয়া তোমার কর্তব্য । হে বজ্রধারী, হে ধনাধিপতি, সেই ধন তোমার উভয় হস্তে প্রদান কর।।
ইন্দ্রস্য সোম রাধসে পুনানো হার্দি চোদয়। দেবানাং যোনিমাসদম।। ১১৮০।।
অনুবাদ:হে ইন্দ্রের প্রিয় সোম তুমি পরিশুদ্ধ হয়ে আমাদের সর্বসিদ্ধিকর ধনের জন্য দেবগণের স্থানে গমনকারি জলকে প্রেরণ কর।।
বয়ং তে অস্য রাধসে বসোর্বসো পুরুস্পৃহ: নি নেদিষ্ঠতমা ইয: স্যাম সুম্নে তে অধ্রিগো।। ১২৩৯।।
অনুবাদ: হে সকল ধনের ধন ইন্দ্র, আমরা যেনো তোমার সর্বসিদ্ধিকর ধনের কাছে থাকি যে ধন সকলেই চায়; হে অপ্রতিহতগতি ইন্দ্র, আমরা যেন সদাই তোমার অন্ন ও বলের কাছে বাস করি।।
মৎসি বায়ু মিষ্টয়ে রাধসে নো মৎসি মিত্রাবরুণা পুয়মান: । মৎসি শর্ধো মারুতং মৎসি দেবান্ মৎসি দ্যাবাপৃথিবী দেব সোম।।১২৫৪।।
অনুবাদ: হে সোম দেব, তিুমি শুদ্ধিকৃত হয়ে আমাদের ইস্টিসাধনের জন্য এবং সর্বসিদ্ধিকর ধনদানের জন্য বায়ুকে মত্ত কর, মিত্র ও বরুনকে মত্ত কর, প্রবল মরুদ্গণকে মত্ত কর, দেবগণকে মত্ত কর, দুল্যোক ও পৃথিবীকে মত্ত কর।।
ত্বা হি রাধসম্পতে রাধসো মহ: ক্ষয়স্যাসি বিধর্তা । তং ত্বা বয়ং মঘবন্নিন্দ্র গিবর্ণ: সুতাবন্তো হবামহো।। ১৩২২।।
অনুবাদ: তুমিই, হে সর্বধনের স্বামী, মহাধনের পরিচর্যাকারীদের গৃহের বর্ধয়িতা। সেই তোমাকে হে মঘবা, হে ইন্দ্র, হে স্তুতিপ্রিয়, আমরা সোম-অভিষবকারীরা আহ্বান করি।।
তমু ত্বা নূনমসুর প্রচেতসং রাধো ভাগমিবেমহে। মহীব কৃত্তি: শরণা ত ইন্দ্র প্র তে সুম্না নো অশুাবন।।১৪১২।।
অনুবাদ: দেবগণের আহ্বানকারী অগ্নি যিনি মানুষের মধ্যে অবস্থান করেন তিনি আমাদের স্তুতিতে প্রীত হোন। তিনি দিব্যজনের পূজা করেন।
সাকং জাত: ক্রতুনা সাকমোজসা ববক্ষিথ সাকং বৃদ্ধা বীর্যে: সাসহিমৃধো বিচর্ষণি:। দাতা রাধ: স্তবতে কাম্যং বসু প্রচেতন সৈনং সশ্চদ দেবো দেবং সত্য ইন্দ্র: সত্যমিন্দ্রম।।১৪৮৭।।
অনুবাদ: হে মহান ইন্দ্র, তুমি বল ও কর্মের সহিত যুক্ত হয়ে জাত হয়েছ। বিশ্বদ্রষ্টা তুমি নিজ শক্তিবলে প্রবৃদ্ধ হয়ে বিঘ্ননাশকরুপে বর্তমান। হে প্রকৃষ্টজ্ঞানী, তুমি স্তুতিকারীকে কাম্য বস্তু দান করে থাক। দীপ্ত সত্য সোম দীপ্ত সত্য ইন্দ্রের সঙ্গে মিলিত হোন।
এন্দুমিন্দ্রায় সিঞ্চতে পিবাতি সোম্যং মধু। প্র রাধাংসি চোদয়তে মহিত্বনা।।১৫০৯।।
অনুবাদ: ইন্দ্রের উদ্দেশে সোম সিঞ্চন কর, তিনি সোমময় মধু পান করে থাকেন এবং সোমপানের দ্বারা মহান হয়ে সর্বসিদ্ধিকর ধনসম্পদ প্রেরণ করেন।
উপো হরীণাং পতিং রাধ: পৃঞ্চন্তমব্রবম্। নূনং শ্রুধি স্তবতো অশ্বস্য ।।১৫১১।।
 অনুবাদ:  রশ্মিগণের অধিপতি, সর্বসিদ্ধিকর ধনের মিশ্রণকারী ইন্দ্রকে বলছি; তিনি স্তবকারী অশ্ব্য ঋষির স্তুতি অবশ্যই শুনুন।
অশ্বং ন গীর্ভী রথ্যং সুদানবো মর্মৃজ্যন্তে দেবয়ব: উভে তোকে তনয়ে দস্ম বিশপতে পর্ষি রাধো মধোনাম।।১৫৮৪।।
অনুবাদ:  হে দর্শনীয় অগ্নি, সুন্দরদানযুক্ত দেবকামী ধার্মিকগণ তীব্রগতিবিশিষ্ট রথচালক অশ্বের মতো মোমাকে স্তুতি দ্বারা পরিচর্যা করেছেন ( বা অলঙ্কৃত করেছেন); হে জনগণের পালক অগ্নি, তুমি ধনবানের ধন আমাদের পুত্র-পৌত্রের জন্য ক্ষরিত কর।।
স্ত্রোত্রং রাধানাং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে। বিভূতিরস্ত্ত সুনৃতা।।১৬০০।।
অনুবাদ:  হে রাধাপতি( = সর্বসিদ্ধিগণের ধনের অধিপতি ), হে গীর্বাহ( = মেঘগর্জনরুপ বাক্য অথবা স্তুতি বাক্য যাঁহাকে বহন করে), হে বীর তোমার স্তোত্র এরুপ; তোমার বিভূতি (=ঐশর্য) প্রিয় সর্তকর্মের দ্বারা সাধিত হোক।
ত্বং নশ্চিত্র উত্যা বসো রাধাংসি চোদয়। অস্য রায়স্তমগ্নে রথীয়সি বিদা গাধং তুচে তু ন:।।১৬২৩।।
অনুবাদ:  হে বিচিত্রধন অগ্নি আমাদের পালন ইচ্ছাকরে সর্বার্থসাধক ধন দান কর; এ ধনের হে অগ্নি, তমিই চালক যে সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করবে।
মা তে রাধাংসি মা ত উতয়ো বসোহস্মান্ কদিা চনা দভন্। বিশ্বা চ ন উপমিমীহি মানূষ বসূনি চর্ষণিভ্য আ।।১৭২৪।।
অনুবাদ:    হে আশ্রয়দাতা ইন্দ্র, তোমার ধন এবং রক্ষা আমাদের যেনো কখনো দম্ভযুক্ত না করে, (=তোমা প্রদত্ত ধন লাভ করে এবং তোমার দ্বারা সুরক্ষিত হয়ে আমরা যেনো লোকরঞ্জণের জন্য কর্মানুষ্ঠানে কখনো প্রবৃত্ত না হই)। মানুষের হিতকারী হে ইন্দ্র, সকল মানুষের কাম্যবস্তু লাভের জন্য তোমার সকল ধন পাবার আশায় তোমার কাছে এসেছি।। [ধম্ভ ধাতুর অর্থ-লোকরঞ্জনের জন্য কর্মানুষ্ঠান করা(মাধবীয়া ধাতুবৃত্তি)]
অগ্নে বিবস্বদুষসশ্চিত্রং রাধো অমর্ত্য আ দাশুষে জাতবেদো বহা ত্বমদ্যা। দেবাং উষর্বুধ: ।।১৭৮০।।
 অনুবাদ:   হে অগ্নি তমোনাশক তুমি; নিয়ে এস তার জন্য উষা হতে বিচিত্র ধন যে তোমাকে চায়; হে অমর্ত্য, হে জাত প্রজ্ঞান, আজ আন সেই দেবদের যাঁরা উষাকালে জাগরিত।।
ইষ্কর্তারমধ্বরস্য প্রচেতসং ক্ষয়ন্তং রাধসো মহ:। রাতিং বামস্য সুভগাং মহীমিষং দধাসি সানসিং রয়িম্।।১৮২০।।
অনুবাদ:   তুমি শোভন যজ্ঞকর্মের সম্পাদক, জ্ঞাণী, বাসপ্রদ ও উত্তম ধনদাতা; তুমি ভজনীয় সৌভাগ্যযুক্ত সর্বার্থক ধন ও প্রচুর অন্ন দিয়ে থাক।

রাধ শব্দ নিয়ে মোট ৩৬টি মন্ত্র রয়েছে তার মধ্যে ১৬৫, ৭৩৭, ১৬০০ নং মন্ত্রগুলিতে রাধানাং পতে শব্দটি ব্যাহার হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে ১৬৫নং ও ৭৩৭নং মন্ত্র একই শুধুমাত্র একটি শব্দ ছাড়া। এই ৩৬টি মন্ত্রর মাধ্যমে বোঝা যায় ইন্দ্র ধনপতি বা রাধাপতি। শুধু ধন নয় অধিক ধন কিংবা বিচিত্র ধন। লক্ষ্মী দেবীকে ধনের দেবী-সৌভগ্যের দেবী রাধিকার কারনেই বলা হয়ে থাকে।

আসুন দেখি ঋগ্বেদ সংহিতায় কি বলা হয়েছে দেখি 

স্তোত্রং রাধানং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে। বিভূতিরস্ত্ত সুনৃতা ।৫।

হে রাধাপতি স্তুতিভাজন বীর! তোমার এরুপ স্তোত্র; তোমার বিভূতি প্রিয় ও সত্য হোক ।

…………… মন্ডল০১, সুক্ত৩০, মন্ত্র০৫


বিভক্তরাং হবামহে বসোশ্চিত্রস্য  রাধস: সাবিতারং নৃচক্ষসম্ ।৭।

সখায় আ নি যীদত সবিতা স্তোম্যো নু ন: । দাতা রাধয়সি শুম্ভতি ।৮।

অনুবাদ: সমস্ত প্রাণীর আশ্রয়ভূত, বিভিন্ন প্রকার ধনের প্রদাতা ও মনুষ্যদের প্রকাশকারী সূর্য্যদেবকে আমরা আহ্বান করি। হে সখাগণ চারিদিকে উপবেশন করো সবিতাদেবকি শীঘ্র স্তুতি করো, ধনদাতা সূর্যদেব শোভা পাচ্ছেন।

………… মন্ডল০১, সুক্ত২২, মন্ত্র (৭-৮)


এই সূক্তটির(২২),  ১৮নং মন্ত্রে দেখা যায় বিষ্ণুর গোপা অর্থাৎ বিষ্ণুর গোপাল রুপ। এবং ১৯নং মন্ত্রে দেখা যায় ইন্দ্র বিষ্ণুর সখা। তাহলে বিষ্ণু আর ইন্দ্র কি আলাদা আলাদা বেদিক ইশ্বর? অবশ্যই না। ইশ্বর এক তার ভিন্ন নাম ইন্দ্র ও বিষ্ণু অর্থাৎ বিষ্ণুই ইন্দ্র।

বিষ্ণু/ কৃষ্ণই যে ইন্দ্র তার কিছু প্রমান দেখা যাক

  • সনতকুমার সংহিতার ৭৬নং শ্লোক
  • পদ্মপুরান, পাতাল খন্ডম, অধ্যায় ৫০, শ্লোক নং ৫৬
  • গীতা ১০/২২
  • কৃষ্ণ বলেন, আমিই  ত্রিভুবনে সেই সেই বেশে, সেই সেই রুপে বিষ্ণু ব্রহ্মা ইন্দ্র এবং উৎপত্তি লয়ের কারণ হয়ে থাকি( ৬৯/১৪ অাশ্বমেধিক পর্ব)

  


ঋগ্বেদ ৩/১৫/৩: এখানে রাধার পিতা  বৃষভানুর উল্লেখ রয়েছে।
      



এখন আসুন দেখা যাক কৃষ্ণ যযুর্বেদ সংহিতায় কি বলা হয়েছে দেখি 

স্তোমত্রয়স্ত্রিংশে ভুবনস্য পত্নি বিবস্বদ্বাতে অভি ন: গৃণাহি। ঘৃতবতী সবিতারাধিপত্যৈ: পয়স্বতী রস্তিরাশা নো অস্ত। ধ্রুবা দিশাম্ বিষ্ণুপত্নঘোরাহস্যোশানা সহসো যা মানোতা । বৃহস্পতিস্মার্তরিশ্বোত বায়ু: সন্ধুবানা বাতা অভি নো গৃণন্ত । বিষ্টম্ভো । দিবো ধরুণ: পৃথিব্যা  অস্যেশানা জগতো বিষ্ণুপত্নী।

……………… কৃষ্ণযযুর্বেদ কান্ড০৪, প্রপাঠক ০৪, মন্ত্র ১২


       এই মন্ত্রে “ঘৃতবতী সবিতারাধিপত্যৈ: পয়স্বতী” দ্বারা প্রচুর পরিমানে ঘি বোঝায়। সবিতা যিনি ঘি ও দুধ দেয় । মন্ত্রটিকে কেউ কেউ নীলাকে উদ্ধেশ্য করে বলা হয়েছে বলা হয় আবার কেউ কেউ রাধাকে উদ্ধেশ্য করে বলা হয়েছে বলে থাকেন। নারদ পঞ্চরাত্র অনুসারে রাধাই নীলা।


অথর্ববেদ সংহিতায় রাধা সম্পর্কে কি বলা হলো দেখি

নিরুক্তের প্রয়োগ রাধা ইতি ধননাম বলিয়া রাধা অর্থে শুধু ধন বলিলে অথর্ববেদের আকাল পড়িবে। রাধা অর্থে অন্য অর্থও বোঝায়।

রাধে বিশাখে শুহবানুরাধা জ্যেষ্ঠা সুনক্ষত্রমরিষ্ট মুলম্।। ১৯/৭/৩ অথর্ব বেদ। ঋষি গার্গ্য

অনুবাদঃ রাধাই বিশাখা নক্ষত্র আবাহন যোগ্য তথা অনুরাধা, জেষ্ঠা এবং মুল নক্ষত্র মঙ্গলপ্রদ।


ভাষ্যটি শ্রী রাম শর্মার।

এই মন্ত্রটি নিয়ে নব্যার্য্যরা কি বলে দেখে নেওয়া যাক

ভাষ্যটি হরিশরন সিদ্ধান্তলংকারের

এখানে অম্বর সহ দেওয়া হয়েছে। রাধে বিশাখা অর্থে রাধা আর বিশাখা নামে নক্ষত্রই সংসারের মুখ্য কার্য্যসিদ্ধি বলা হচ্ছে। অনুরাধা নক্ষত্রকেউ মুখ্য বলা হচ্ছে।

ভাষ্যটি তুলশীরামের

এখানকার অনুবাদে রাধা অনুরাধা শব্দটিকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।😂😂😂😂

রাধা নামে ২৮নক্ষত্রে তালিকায় কেনো নক্ষত্র পাওয়া যায়না। বিশাখা অর্থে ইন্দ্র+অগ্নি কে বোঝায়। বিশাখা অর্থে সুচর্মী, জাহ্নবী, হৃদ্ময়ী, শিৎময়ী নামক তারার নামও বোঝায়। এখান থেকে বোঝা যায় যে রাধাই বিশাখা-অনুরাধা-মুলা-জেষ্ঠা। রাধার যে অস্টসখীর নামগুলি পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই নক্ষত্র ও তারার নামগুলি থেকে নেওয়া।

দেবতা স্বাতী নক্ষত্রং বায়ুর্দ্দেবতা বিশাখে নক্ষত্রমিন্দ্রাগ্নী দেবতাহনুরাধা নক্ষত্রং মিত্রো দেবতা।

এখানে নক্ষত্র দেবতার কথা বলা হচ্ছে।

………… কৃষ্ণ যজুর্বেদ ৪/৪/১০


শ্রীশ্চ তে লহ্মীশ্চ পত্ন্যাবহোরাত্রে পার্শ্বে নক্ষত্রাণি রুপমশ্বিনৌ ব্যাত্তম্। ইঞ্চন্নিষাণামুং ম ইষাণ সর্বলোকং ম ইষাণ।।

অনুবাদ: এখানে শ্রী অর্থে সর্বজনের আশ্রয়যোগ্য সম্পদ অর্থাৎ ভূদেবী লহ্মী শব্দে সৌন্দর্য্য অর্থাৎ লহ্মীদেবী আর নক্ষত্র অর্থে নিজের রুপ অর্থ্যাৎ রাধা/নিলা দেবী।

………… শুক্ল যজুর্বেদ ৩১/২২


অতারিষূর্ভরতা গব্যব: সমভক্ত বিপ্র: সুমতিং নদীনাম।
প্র পিগ্বধ্বমিষয়ন্তী  সুরাধা আ বক্ষণা: পৃণধ্বং যাত শীভম্।।

অনুবাদ: বিশ্বামিত্র গোপীদেরকে বলছেন: “ কৃষ্ণ সকল ভক্তি ধর্মের পুষ্টি । গোপালরা জন্ম-মৃত্যুর সাগর পার হয় তার কারনে। সে সকল ব্রহ্মা সহ ইত্যাদিদের প্রধান আরোধ্য। সে সকল ভক্তদের আলোকিত করে ও জ্ঞান দান করেন।  সুন্দরী রাধার(গোপীদের নেত্রী) সহিত সকল গোপী যুবতী  তার সঙ্গ পায় সর্বদা।
................... ঋগ্বেদ ৩/৩৩/১২ (নীলকণ্ঠ ভাষ্য)


উপরের রেফারেন্সগুলি থেকে স্পস্ট বোঝা যায় যে বেদের সংহিতায় রাধা বিদ্যমান। বেদের রাধাই পুরানের আদ্যাশক্তি মুল প্রকৃতি। শেষে একটি ত্যনা থেকেই যায় যে দ্বাফরের পূর্বে রাধা বেদে কি করে আসলো? কৃষ্ণদৈপায়ন বেদব্যাস যেখানে ত্রিকালদর্শক ছিলেন সেখানে বেদের ঋষিরা ক্ষমতা কতোটা ছিলো নিজেই ভেবে নিন। ওনারা তো সবই দর্শন করেছেন।




6 comments:

  1. সামবেদের যে রেফারেন্স দিয়েছেন, সেখানে নিজেই লিখেছেন রাধানং পতে অর্থাৎ ধনের অধিপতি হলেন ইন্দ্র।
    আচ্ছা তো ভাল কথা। আপনাদের কাল্পনিক রাধার সাথে ইন্দ্রের বিয়ে কবে হল?
    ইন্দ্র কি করে রাধার পতি হয়, যদি এই রাধা ঐ রাধা হয়।
    মন্ত্রে আয়ান ঘোষকে সম্বোধন করলে, তাও মানতাম।
    নিজে দিতে গিয়ে নিজের রেফারেন্সে নিজেই ধরা😂😂

    ReplyDelete
    Replies
    1. আয়ান ঘোষের কথা এখানে কোথায় বলা হয়েছে? রাধা কাল্পনিক হলে বিষ্ণুর গোপী স্ত্রী কি তোর বোন লাগে ধান্দাবাজ?

      Delete
  2. নিরুক্তাকার যাস্ক রাধা শব্দের অর্থ ধন করেছেন (রাধ ইতি ধননাম ; নিরুক্ত ৪।৪)

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাধা অর্থে ধন এটা কোথায় অস্বীকার করা হয়েছে ফন্ডিত? রাধা অর্থে শুধু ধন হলে অথর্ববেদের রেফারেন্স এর অর্থ করে দেখাও গাঞ্জাঁখোর

      Delete
  3. অনেক খেটেছেন।ধন্যবাদ। কিন্তু বেদের রাধা আর জয়দেবের রাধা এক নয়। ভাগবত পুরাণেও রাধা নেই।রাধা চরিত্রটা সৃষ্টি করতে ভাগবত পুরাণ সৃষ্টির পরে আরও হাজার বছর লেগেছিল। আমরা কৃষ্ণের পাশে রাধা বলতে যাকে দেখি তিনি একজন প্রধানা গোপিনী। এই প্রধানা গোপিনী তার রাধা নামটা পেয়েছেন অনেক পরে। এটা ভাবসাহিত্যের অভিব্যক্তি বলা যায় আর এই সাধনার পথে আমাদের সাহিত্য ভাবসমৃদ্ধ হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ল্যাপটপে ব্লগ ওপেন করা হয়নি বলে আপনার কমেন্ট দেখা হয়নি। রিপ্লাই দিতে দেরী হলো বলিয়া দু:ক্ষিত। অজ্ঞতা নিয়ে কমেন্ট করা বৈশিষ্ঠে দ্বাড়িয়ে গিয়েছে আপনাদের। রাধা মহাভারত রচনার পূর্বে রচিত গর্গ মুনির গর্গ সংহিতাতে রয়েছে। জয়দেবের মাধ্ব্য গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের একজন বৈষ্ণব। জয়দেবের বহু পূর্ব থেকে তথা চৈতন্যদেবের পূর্বে মাধবেন্দ্রপুরীর রাধা নিয়ে প্রচুর লেখা রয়েছে। শঙ্করাচার্য্য তার লেখায় রাধা নিয়ে লিখেছেন। শঙ্করাচার্য্যর সমসাময়িক কিংবা তারও পূর্বের নিম্বাদিত্য(নিম্বার্কাচার্য্য) তার বেদান্ত দশশ্লোকাদিতে রাধার উল্লেখ করিয়াছেন। মহাভারতের কয়েক যায়গায় উল্লেখিত পঞ্চরাত্র সংহিতার মধ্যে নারদ পঞ্চরাত্রতে রাধা নিয়ে প্রচুর লেখা রয়েছে। বিষ্ণু পুরানের পূর্বে রচিত পদ্মপুরানে রাধা বিদ্যমান। সনত কুমার সংহিতা অনুসারে রাধাই মহালহ্মী। মৎসপুরান ও স্কন্দ পুরান অনুসারে রাধাই রুক্মীনি। নারদ পুরান অনুসারে রাধা হতেই পঞ্চপ্রকৃতি তথা মহালহ্মীর আবির্ভাব। শিব পুরানে লিঙ্গ পুরানে রাধার অসংখ্য কাহিনী বিদ্যমান। কালিপ্রসন্ন সিংহের মহাভারতে, গীতা প্রেসের মহাভারতে কীর্তি বলিয়া এক দেবী নারায়নের সহিত বিদ্যমান, তিনিই রাধা। আপনার বেদের রাধা অর্থে নক্ষত্র দেবী মানতে সমস্যা কোথায় বলেননি। রাধা নিজেই অগ্নি ও ইন্দ্র। এখানে মাতৃশক্তি পরমেশ্বরি।

      Delete