Saturday, September 3, 2022

আদি বিরাট পুরুষ নারায়ন

 আদি বিরাট পুরুষ নারায়ন




আদি বিরাট পুরুষ নারায়ন
মনুসংহিতা: প্রথম অধ্যায়

আপো নারা ইতি প্রোক্তা আপো বৈ নরসূনব: ।
তা যদস্যাযনং পূর্ব্ব তেন নারায়ণ: স্মৃত: ।। ১০।।

নর নামক পরমেশ্বররের দেহ হইতে জলের সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া উহাকে নার বলা যায়, যেহেতু ঐ জলসকল প্রলয়কালে পরমাত্মার অয়ন অর্থাৎ স্থান হয়, এই জন্য পরমাত্মা নারায়ন শব্দে কথিত হইয়াছেন।
মহাভারত: শান্তি পর্ব ৩৩৪ অধ্যায়
তত্রাধ্যাত্মগতিং দেব একাকী প্রবিচিন্তয়্ন ।
বৈরাজসদনাম্নিত্যং বৈজয়ন্তং নিষেবতে ।।১০।।
অনুবাদ: ব্রহ্মা প্রত্যহ আধ্যাত্মচিন্তা করিতে থাকিয়া বৈরাজ নামক নিজ ভবন হইতে আসিয়া সেই বৈজয়ন্ত পর্ব্বতে অবস্থান করিতেন ।।১০।।
অথ তত্রাাসতস্তস্য চতুর্ব্বক্ত্রস্য ধীমত: ।
ললাট প্রভব: পুত্র: শিব আগাদ্যদৃচ্ছয়া ।।১১।।
অনুবাদ: তাহার পর একদা জ্ঞাণী ব্রহ্মা সেই বৈজয়ন্ত পর্বতে অবস্থান করিতে থাকিলে তাহার ললাট হইতে উৎপন্ন পুত্র মহাদেব(শিব) ঈশ্বরেচ্ছাক্রমে তাহার নিকটে আগমন করিলেন ।।১১।।
আকাশেন মহাযোগী পুরা ত্রিনয়ন: প্রভু: ।
তত: খান্নিপপাতাশু ধরণীধরমূর্দ্ধনি ।।১২।।
অনুবাদ: মহাযোগী ও প্রভাবশালী মহাদেব আকাশপথে আসিয়া সত্বরই সেই আকাশ হইতে বৈজয়ন্ত পর্বতের উপরে নিপতিত হইলেন ।।১২।।
অগ্রতশ্চাভবৎ প্রীতোববন্দে চাপি পাদয়ো: ।
তং পাদয়োর্নিপতিতং দৃষ্ট্বা সব্যেন পাণিনা ।। ১৩।।
উথ্থাপয়ামাস তদা প্রভুরেক: প্রজাপতি: ।
উবাচ চৈনং ভগবাংশ্চিরস্যগতমাত্মজম্ ।।১৪।।
অনুবাদ: ক্রমে মহাদেব ব্রহ্মার সম্মুখবর্ত্তী হইয়া প্রীতিবশত: তাঁহার চরণযুগলে প্রণত হইলেন, তখন ব্রহ্মা তাঁহাকে চরনযুগলে পতিত দেখিয়া, বামহস্তদ্বারা তাঁহাকে উঠাইলেন এবং প্রভাবশালী একাকী ভগবান্ ব্রহ্মা দীর্ঘকালের পর উপস্থিত সেই পুত্র মহাদেবকে বলিলেন।। ১৩-১৪।।
পিতামহ উবাচ:
স্বাগতং তে মহাবাহো! দিষ্ট্যা প্রাপ্তোহসি সেহন্তিকম্ ।
কচ্চিত্তে কুশলং পুত্র ! স্বাধ্যায়তপসো: সদা।
নিত্যমুগ্রতপাস্ত্বং হি তত: পৃচ্ছামি তে পুন: ।। ১৫।।
অনুবাদ: ব্রহ্মা বলিলেল- মহাবাহু! তোমার সুখে আগমন হইয়াছে ত? তুমি আজ ভাগ্যক্রমে আমার নিকট উপস্থিত হইয়াছো। পুত্র! তোমার বেদ পাঠ ও তপস্যার সর্ব্বদা মঙ্গল ত? তুমি সর্ব্বদাই ভীষণ তপস্যা করিয়া থাকো, সেই জন্যই আমি তোমার নিকট ইহা জিজ্ঞাসা করিতেছি।। ১৫।।
রুদ্র উবাচ:
ত্বৎপ্রসাদেন ভগবন্! স্বাধ্যায়তপসোর্ম্মম ।
কুশলঞ্চাব্যয়ঞ্চৈব সর্ব্বস্য জগতস্ত্বথ ।।১৬।।
শিব বলিলেন ভগবান্ আপনার অনুগ্রহে আমার বেদপাঠ ও তপস্যার এবং সমস্ত জগতের মঙ্গল ও স্থিতি চলিতেছে।।১৬।।
ব্রহ্মোবাচ:
বৈজয়ন্তো গিরিবর: সততং সেব্যতে ময়া ।
অত্রৈকাগ্রেণ মনসা পুরষশ্চিন্ত্যতে বিরাট্ ।।২১।।
অনুবাদ: আমি সর্বদা এই পর্বত শ্রেষ্ঠ বৈজয়ন্তের সেবা করি । এবং এখানে থাকিয়া একাগ্রচিত্তে বিরাট্ পুরুষের চিন্তা করিয়া থাকি ।২১।।
রুদ্র উবাচ :
বহব: পুরষা ব্রহ্মংস্ত্বয়া সৃষ্টা: স্বয়ম্ভুবা ।
সৃজ্যন্তে চাপরে ব্রহ্মন্ ! স চৈক: পুরুষ বিরাট্ ।।২২
শিব বলিলেন- ব্রহ্মণ! আপনি স্বয়ং উৎপন্ন হইয়া বহুপুরষ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং অপরও অনেক পুরুষ সৃষ্টি করিতেছেন, আর সেই বিরাট পুরুষ এক । ২২।।
কো হ্যসৌ চিন্ত্যতে ব্রহ্মংস্ত্বয়ৈক: পুরুষোত্তম: ।
এতম্মে সংশয়ং ব্রুহি মহৎ কৌতূহলং হি মে ।।২৩।।
ব্রহ্মন্! আপনি যে এক পুরুষশ্রেষ্ঠের চিন্তা করেন, তিনি কে? আপনি আমার এই সন্ধিগ্ধ বিষয়ে বলুন; ইহা শুনিবার জন্য আমার গুরুতর কৌতুক জন্মিয়াছে ।।২৩।।
ব্রহ্মবাচ। (একবারে ৩০নং শ্লোকে) ।।২৪।।
মমান্তরাত্মা তব চ যে চান্যে দেহসংজ্ঞিতা: ।
সর্বেষাং সাক্ষিভুতোহসৌ ন গ্রাহ্য: কেনচিৎ ক্বচিৎ ।।৩০।।
অনুবাদ: আমার তোমার এবং অন্য যে সকল দেহী আছে তাঁহাদের তিনি অন্তরাত্মা এবং সকলেরই তিনি সাক্ষিস্বরুপ, কিন্তু কখনও কোন লোকই তাঁহাকে জানিতে পারেনা। ৩০।।
এবং হি পরমাত্মানং কেচিদিচ্ছন্তি পন্ডিতা: ।
একাত্মানাং তথাত্মানমপরে জ্ঞাণচিন্তকা: ৩৯।।
অনুবাদ: অনেক জ্ঞাণী এই পরমাত্মাকে এক(অখন্ড) মনে করেন; আবার অন্য জ্ঞাণীরা বহুতর বলিয়া ধারনা করিয়া থাকেন।।৩৯।।
তত্র য: পরমাত্মা হি স নিত্যং নির্গুণ: স্মৃত:
স হি নারায়ণো জ্ঞেয়: সর্বাত্মা পুরুষো হি স:।। ৪০।।
সেই উভয় মতেই যিনি পরমাত্মা তিনি সর্ব্বদাই নির্গুণ এবং এবং তাঁহাকে নারায়ণ বলিয়া জানিবে এবং তিনিই সকলের জীবাত্মা।।৪০।।
দেবা: সর্ব্বে মুনয়: সাধুশাস্তাস্তং প্রাগবংশে যজ্ঞভাগং যজন্তে ।
অহং ব্রহ্মা আদ্য ঈশ: প্রজানাং তস্মাজ্জাতস্ত্বঞ্চ মত্ত: প্রসূত: ।
মত্তো জগজ্জঙ্গমং স্থাবরঞ্চ সর্ব্বে বেদা: সরহস্যা হি পুত্র !।।৪৬।।
অনুবাদ: পুত্র! সমস্ত দেবতা ও সম্যক শমগুণান্বিত মুনিরা যজ্ঞালয়ে যজ্ঞভাগ দান করিয়া সেই নারায়নের পূজা করেন এবং সমস্ত লোকের আদিম ও নিয়ন্তা আমি ব্রহ্মা যাহা হইতে জন্মিয়াছি; আর তুমি আমা হইতে জন্মিয়াছ; তারপর স্থাবর জঙ্গমাত্মক সমস্ত জগৎ আামা হইতে উৎপন্ন হইয়াছে; আর বিধিমন্ত্রপ্রভৃতি সমেত সকল বেদ আমা হইতে আবির্ভাব লাভ করিয়াছে। ৪৬।।
মহাভারতে আরো কয়েক যায়গায় শিবকে ব্রহ্মার পুত্র বলা হয়েছে । এখানে ব্রহ্মাকে সয়ম্ভু বলার পরেও তার সৃষ্টি পরে হয়েছে নারায়ন থেকে। এছাড়া শিবের সহস্র নামে নারায়ন নামটি নাই।

No comments:

Post a Comment